কলকাতা: বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে বাংলাদেশে (Bangladesh)? প্রশ্ন উঠছে। কারণ, স্থানীয় কোনও আইনজীবী সঙ্গে নেই, এই অজুহাতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের শুনানি এগিয়ে নিয়ে আসার আবেদন খারিজ করা হল। একুশে আইন দেখিয়ে সন্ন্যাসীর আইনজীবীর আবেদন খারিজ। চট্টগ্রাম আদালতে হলই না শুনানি।
গোটা ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ প্রবীণ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্লক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি শুধু আইনজীবী নই, মানবাধিকার কর্মীও। আমি ওকালতি করি নিজের জীবন রক্ষার জন্য নয়, সংখ্যালঘুদের পাশে থাকতে। আমি নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করি। ফি দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করা কঠিন হবে কারণ আমি এগুলো পছন্দ করি না। আমি যেহেতু দীর্ঘদিন সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করি, আমার ডকুমেন্টেশন, কাগজপত্র, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং অনেক। আমি এটা জজসাহেবকে বিভিন্ন সময়ে দেখিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসনকে দেখিয়েছি। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এরকম অপরাধের বিরুদ্ধে তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করছেন না। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হলে ওঁরা তদন্ত করবেন, ওঁরা সুফল কিছু দিতে পারেন না। সেই জন্য আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছি, শুধু চিন্ময় প্রভু নন, এরকম আরও যাঁরা আছেন, যাঁরা বিচার পাচ্ছেন না, তাঁদের সকলের পাশে দাঁড়িয়ে আমি লড়াই করব।'
কেন স্থানীয় আইনজীবীরা চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না? রবীন্দ্র ঘোষ বলছেন, 'বাংলাদেশে আইনজীবীদের প্রতি অনেক হুমকি রয়েছে। এক আইনজীবীকে তো মেরেই ফেলত। যে এখন হাসপাতালে আছে। স্থানীয় আইনজীবীদের চিন্ময় প্রভুর হয়ে মুখ খুলতেই দিচ্ছে না।'
ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার? 'জজসাহেব সকাল ১১টায় যখন কোর্টে উঠলেন, আমি বললাম শুনানি করতে চাই। উনি অনুমতি দেন। কিন্তু বিকেল আড়াইটে-তিনটে নাগাদ যখন শুনানি শুরু হল, তখন প্রায় ৩০-৪০ জন আইনজীবী কোনও অনুমতি ছাড়াই এজলাসে ঢুকে পড়ল। এটা কী করে সম্ভব? ওদের কোনও ওকালতনামা ছিল না। কাদের হয়ে ওরা গেল? অভিযুক্তের হয়ে, নাকি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে? কেন আমার কথা শোনা হল না? আমি জজসাহেবের ওপর সত্যিই মনক্ষুণ্ণ। আমাকে স্থানীয় আইনজীবী আনতে বললেন। আমি স্থানীয় আইনজীবী কোথায় পাব? যখন চিন্ময়কৃষ্ণর হয়ে স্থানীয় আইনজীবীরা দাঁড়াতে গিয়েছিল, সেটা করতে দেওয়া হয়নি। শুনেছি ওরা গোপন বৈঠক করেছে যে, এখানে চিন্ময়কৃষ্ণর হয়ে কোনও আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। হেনস্থা করা হবে। কেন আইনজীবী এখানে আসবেন?' বলছেন রবীন্দ্র ঘোষ।
প্রবীণ আইনজীবী আরও বলেন, 'আমাকে বলা হল, আমি এই আদালতে দাঁড়াতে পারব না। আমি ওকালতনামা নিয়ে এসেছিলাম। আমাকে বলা হয়, আপনার এখানকার আইনজীবী লাগবে। আমি প্রশ্ন করি, কেন? এখানকার আইনজীবী তো লাগার কথা নয়। তারপর জজসাহেব বলেন, আমি পেন্ডিং রাখলাম, আপনি এখানকার আইনজীবী আনুন। বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। কেন আইনজীবীরা দাঁড়াবে? চট্টগ্রাম আদালতের ভূমিকা বৈষম্যমূলক। শুনানি স্থগিত রেখে দেওয়ার কী অর্থ?'
পরবর্তী পদক্ষেপ কী? রবীন্দ্র ঘোষ বলছেন, 'উচ্চ আদালতে যাব। কীভাবে যাব? ২ জানুয়ারি যদি শুনানি হয়, তাহলেও আরও একমাস লেগে যাবে হাইকোর্টে মামলা নিয়ে যেতে। জেলে থাকতে হবে আরও একমাস। বিচার দেব কী করে?'
আরও পড়ুন: দীর্ঘ ৬ মাস পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরল মিতালি এক্সপ্রেস
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।