সদগুরু: আপনার কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা আপনি খাবারকে নিয়ে কী ভাবেন বা আপনার মূল্যবোধ বা নীতিবোধ কী তার উপর নির্ভর করা উচিত নয় বরং দেহ কী চায় তার উপর নির্ভর করা উচিত। খাবার হল দেহের বিষয়। খাবারের প্রসঙ্গ এলে আপনার ডাক্তার বা পুষ্টি-বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করবেন না কারণ এঁনারা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিজেদের মতামত বদলাতে থাকেন। খাবারের প্রসঙ্গ এলে দেহকে জিজ্ঞেস করুন সে কী ধরণের খাবারে খুশি। আলাদা আলাদা রকমের খাবার খান এবং দেখুন খাবারটা খাওয়ার পর দেহটার কেমন লাগছে। যদি শরীরটা খুব ঝরঝরে-চটপটে, প্রাণবন্ত এবং সুন্দর লাগে, তার মানে শরীর খুশি। যদি শরীরে আলসেমি লাগে এবং জেগে থাকতে ক্যাফেইন বা নিকোটিনের দরকার হয়, তার মানে শরীর খুশি নয়, তাই না? 


নিজের শরীরের কথা শুনুন, আপনার শরীর পরিষ্কারভাবেই বলে দেবে কোন ধরনের খাবারে সে খুশি। কিন্তু এই মুহূর্তে, আপনি নিজের মনের কথা শুনছেন। আপনার মন সব সময় আপনাকে মিথ্যা কথা বলে যায়। মন আপনাকে আগেও কি মিথ্যা বলেনি? আজ সে আপনাকে বলে এটাই সত্যি। আগামীকাল সে-ই আপনাকে মূর্খ বলবে গতকাল সেটা বিশ্বাস করায়। তাই মনের মতো করে চলবেন না। আপনাকে শুধু শরীরের ভাষা বুঝতে শিখতে হবে। 


আপনার শরীরে যে খাবার ঢুকছে তার গুণমানের ভিত্তিতে, আপনার সিস্টেমের জন্য সুস্পষ্টভাবে নিরামিষ খাবারই আমিষ খাবারের চেয়ে অনেক বেশি ভাল। আমরা এই ব্যাপারটা নীতি-নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি না। আমরা শুধুই দেখছি দেহতন্ত্রের জন্য কোনটা বেশি মানানসই – আমরা সেই খাবারই খাওয়ার চেষ্টা করি যাতে আমাদের দেহ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যে ধরণের খাবারে আপনার শরীর সবচেয়ে সহজ-স্বচ্ছন্দ অনুভব করবে এবং যে ধরণের খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান বের করতে সবচেয়ে কম খাটতে হবে, আমাদের সেই ধরণের খাবারই খাওয়া উচিত।   
 
কেবল পরীক্ষা করুন আর দেখুন, যখন আপনি নিরামিষ খাবার সজীব(কাঁচা) অবস্থায় খান, তখন কী ধরণের পার্থক্য এনে দিচ্ছে। উদ্দেশ্য হল যাকিছু সজীব অবস্থায় খাওয়া সম্ভব তা যতটা সম্ভব সজীব বা জীবন্ত অবস্থাতেই খাওয়া। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবকিছুই একটা সজীব কোষে আছে। খাবার যখন আমরা রান্না করি, তা খাবারের মধ্যেকার প্রাণকে ধ্বংস করে দেয়। এই ধ্বংস প্রক্রিয়ার পর খাবারটা খেলে তা দেহতন্ত্রকে একই পরিমাণ প্রাণশক্তি দেয় না। কিন্তু যখন আপনি সজীব খাদ্য খান, তা আপনার মধ্যে এক ভিন্ন স্তরের সজীবতা এনে দেয়। মোট খাবারের মধ্যে তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ কাঁচা খাবার অর্থাৎ যা এখনও জীবিত আছে এমনকিছু খেলে আপনি দেখবেন সেটা আপনার ভিতরের প্রাণকেও খুব ভালভাবে জীবন্ত রাখবে। 


সবচেয়ে বড় কথা, আপনি যে খাবার খান সেটাও জীবনই। অন্যান্য আকারে থাকা জীবনকেই আমরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করছি – অন্যান্য আকারের জীবনেরা আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের জীবন ত্যাগ করছে। যে সমস্ত জীবনেরা আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের জীবনকে ত্যাগ করছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে থেকে যদি আমরা খেতে পারি, তাহলে খাবার আপনার ভিতরে খুবই ভিন্নভাবে আচরণ করবে।   


সদগুরু একজন যোগী, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং লেখক। ভারতবর্ষের প্রথম 50 জন প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে একজন। 2017 সালে ভারত সরকার সদগুরুকে ব্যতিক্রমী এবং বিশিষ্ট সেবার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বার্ষিক বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণ-অভিযান “কনশাস প্ল্যানেট – সেভ সয়েল (Conscious Planet - SaveSoil)”-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা পৃথিবী জুড়ে 400 কোটিরও বেশি মানুষকে স্পর্শ করেছে।


 


প্রতিবেদনটি এবিপি লাইভ কর্তৃত সম্পাদিত নয়