(Source: Poll of Polls)
Ratan Tata Death Anniversary: রতন টাটার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতেই টানাপোড়েন চরমে, TATA Trusts-এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা? অমিত শাহের কাছে নোয়েল-চন্দ্রশেখরন
TATA Trusts: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন Tata Trusts-এর চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা, যিনি রতন টাটার সৎ ভাই।
নয়াদিল্লি: ঝড়ঝাপটা আগেও এসেছে। প্রতিবার ঢাল হয়ে দাঁড়ান তিনি নিজে। কিন্তু একবছর হতে চলল রতন টাটা নেই। আর তাঁর অনুপস্থিতিতে, TATA সংস্থার অন্দরে ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। সমস্যা এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেন Tata Trusts-এর চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা, যিনি রতন টাটার সৎ ভাই। রতন টাটার মৃত্যুর পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। Tata Sons-এর চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরন এবং দুই ট্রাস্টিও সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। (TATA Trusts)
গত বছর ৯ অক্টোবর, ৮৬ বছর বয়সে ইহলোক ছেড়ে চলে গিয়েছেন রতন টাটা। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর আগেই TATA গোষ্ঠীর অন্দরে কোন্দল, বিভাজনের খবর সামনে আসছে। ক্ষমতার রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে মূলত TATA Trusts-এর অন্দরেই দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে বলে খবর। TATA Trusts আসলে একটি অলাভজনক সংস্থা, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু TATA Sons-এ তাদের ৬৬ শতাংশ ইকুইটির সার্বিক মালিকানা রয়েছে। ফলে TATA Sons-এল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও TATA Trusts-এর হাতেই। (Ratan Tata Death Anniversary)
TATA Trusts পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, বোর্ডে নিযুক্তির সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে, TATA Trusts-এর চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা, TATA Sons-এর চেয়ারম্যান নটরাজন চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে চার ট্রাস্টি-ডেরিয়াস খাম্বাটা, জাহাঙ্গির এইচসি জাহাঙ্গির, প্রমিত জাভেরী এবং মেহলি মিস্ত্রির সংঘাত দেখা গিয়েছে। এই চার ট্রাস্টি ‘সুপার বোর্ড’ হিসেবে কাজ করছেন, নোয়েল টাটার কথা মানছেন না।
এই সংঘাতের অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে TATA Trusts থেকে TATA International-এ বিনিয়োগ। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে TATA Trusts থেকে TATA International-এ ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বেশ করেন নোয়েল টাটা। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই প্রস্তাব পাস হয়ে গেলেও, পরবর্তীতে ট্রাস্টিদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। TATA Sons-এ ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদ সৃষ্টিরও প্রস্তাবও দেন নোয়েল টাটা, যার তীব্র বিরোধিতা করেন চার ট্রাস্টি। বরং পাল্টা মেহলি মিস্ত্রিকে TATA Sons-এর বোর্ডের সদস্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা মানতে রাজি নন নোয়েল টাটা।
গত ১১ সেপ্টেম্বর যে বৈঠক হয়, তাতে TATA Sons-এর বোর্ডে, মনোনীত ডিরেক্টর হিসেবে ৭৭ বছর বয়সিপ্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব বিজয় সিংহের নিযুক্তি ঘিরে মতবিরোধ দেখা দেয়। রতন টাটার মৃত্যুর পর TATA Trusts-এ নয়া নীতি চালু হয়, যার আওতায় TATA Sons-এর মনোনীত ডিরেক্টরদের পুনরায় নিযুক্তির শর্ত যুক্ত করা হয়। বলা হয়, বয়স ৭৫ পেরোলে পুনরায় নিয়োগ করতে হবে তাঁদের। সেই মতো নোয়েল টাটা এবং ট্রাস্টি বেণু শ্রীনিবাসন, যিনি TVS গ্রুপের চেয়ারম্যান এমিরেটাসও, তাঁরা মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে সায় দেন। কিন্তু চার ট্রাস্টি বিরোধিতা জানান এতে। এর পর মেহলি মিস্ত্রিতে মনোনীত করার দাবি ওঠে, যা খারিজ করে দেন নোয়েল টাা ও বেণু শ্রীনিবাস। নোয়েল টাটার ঘনিষ্ঠদের দাবি, মেহলি মিস্ত্রি ও তাঁর সমর্থকরা TATA-য় অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বিজয় সিংহ।
এর মধ্যেই একটি ইমেল সামনে এসেছে, যাতে মেহলি মিস্ত্রি TATA Sons-এর ইন্ডেপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে অনিতা জর্জের নিযুক্তিতে আপত্তি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। সেই আবহে আগামী ১০ অক্টোবর TATA Trusts-এর বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। সমাজসেবার কাজে ১০০০ কোটি টাকা ঢালা উচিত কি না, সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বৈঠকে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছেন, TATA Trusts এই মুহূর্তে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। একটি অংশ নোয়েল টাটাকে সমর্থন করছে, অন্য অংশের সমর্থন মেহলি মিস্ত্রির দিকে। শাপুরজি পালোনজি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মেহলি মিস্ত্রির। পালোনজি মিস্ত্রির ছেলে সাইরাস মিস্ত্রি একসময় TATA গোষ্ঠীর চেয়ারপার্সন ছিলেন। TATA Sons-এ শাপুরজি পালোনজিদের ১৮.৩৭ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। মেহলি মিস্ত্রিকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে না ডাকার অভিযোগও উঠছে। ১৫৬ বছরের TATA গোষ্ঠীর অধীনে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত। দেশের অর্থনীতিতে TATA গোষ্ঠীর গুরুত্ব বিচার করে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি তুলছেন কেউ কেউ। একজন ব্যক্তির হাতে TATA Trusts-এর দায়িত্ব তুলে দেওয়া ঠিক হবে কি না, উঠছে এই প্রশ্নও।
কয়েক বছর আগে TATA Sons-এও ক্ষমতার রাশ ধরে রাখা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছিল। সাইরাস মিস্ত্রিকে হটানোর বিষয়টি পৌঁছয় আদালতেও। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিন কোর্টকে মধ্যস্থতা করতে হয়। কিন্তু সেই সময় রতন টাটা বেঁচেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ ছিল না কারও মনে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। যে সময় TATA-র অন্দরে টানাপোড়েন চলছে, তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিন বছর আগে TATA Sons-কে ‘Upper Layer Shadow Bank’ হিসেবে চিহ্নিত করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ যে সংস্থার কাজকর্ম ব্যাঙ্কের মতোই, অথচ ব্যাঙ্কের উপর যে সব বিধিনিষেধ, নিয়মনীতি কার্যকর রয়েছে, তার কোনওটাই মানে না তারা। স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
তিন বছরের মধ্যে TATA Sons সংস্থাকে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করতে বলেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ২০২৪ সালে TATA Sons ‘Non Banking’ অর্থনৈতিক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। RBI-এর সেই সময়সীমা শেষ হয়ে আসছে। পাশাপাশি, শাপুরজি পালোনজি গ্রুপপের ঘাড়েও ঋণের বোঝা বেড়েছে। তাদের উপরও চাপ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে TATA Trusts-এ তাদের লবি-র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এই মুহূর্তে। সেই আবহেই শাহ, সীতারামনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন নোয়েল টাটা, নটরাজন চন্দ্রশেখরন।
সেরা শিরোনাম
