কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: চিটফান্ডকাণ্ডে (chit fund) ধৃত হালিশহরের (hali sahar) তৃণমূল (TMC) পুরপ্রধান রাজু সাহানিকে (raju sahani) নিয়ে কোর্টে বিস্ফোরক দাবি সিবিআই-র (CBI)। হংকং, ব্যাঙ্কক-সহ তাইল্যান্ডে রাজুর ৩টি সংস্থার হদিস মিলেছে, জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এতেই শেষ নয়। সৌম্যরূপ ভৌমিক নামে একটি ঘনিষ্ঠের নামে তাইল্যান্ডে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-ও খোলা হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। বর্ধমান (burdwan sanmarg welfare) সানমার্গ ওয়েলফেয়ারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই ধৃতের, পাল্টা দাবি জানিয়ে জামিনের আর্জি রাজুর আইজীবীর।
কী দাবি সিবিআইয়ের?
এদিন মোট ২৫ মিনিট শুনানি হয় । তাতে রাজু সাহানির আইনজীবী প্রদীপ করের বক্তব্য ছিল, বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ারের সঙ্গে ধৃত তৃণমূল পুরপ্রধানের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি সিবিআই। পাশাপাশি কী ভাবে পলাতক সৌম্য়রূপ ভৌমিককে তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও বিস্ময় রয়েছে, দাবি রাজুর আইনজীবীর। যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবীর বক্তব্য, হংকং, ব্যাঙ্কক-সহ তাইল্যান্ডে রাজু সাহানির মোট ৩ টি সংস্থার হদিস মিলেছে। তাইল্যান্ডে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে এক ঘনিষ্ঠের নামে, দাবি সিবিআইয়ের। তদন্তকারীদের বক্তব্য, সৌম্যরূপ ভৌমিক নামে এক ঘনিষ্ঠের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাইল্যান্ডে। উল্লেখ্য এই সৌম্যরূপ ভৌমিক ফেরার, দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। সঙ্গে সংযোজন, লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা গিয়েছে রাজুর বাড়িতেই ছিলেন তিনি। পাশাপাশি রাজু সাহানির বাড়ি-রিসর্ট থেকে ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। ধৃতের আইনজীবীর অবশ্য বক্তব্য, রাজুকে টাকা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল যা তিনি শোধও করে দেন। কিন্তু তা হলে ওই তিন সংস্থা কার? সেটা অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ। আপাতত যে কোনও শর্তে জামিনের আর্জি জানিয়েছেন রাজু সাহানির আইনজীবী।
প্রেক্ষাপট...
হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা রাজু সাহানিকে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল আসানসোলের সিবিআই আদালত। সে বারও সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়, হালিশহরে অভিযুক্তের যে রিসর্ট রয়েছে সেখানকার অফিস থেকে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। চারটি চাবির রিং, লাইসেন্সবিহীন দেশি পিস্তল, ৪টি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। ‘বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন’ নামে যে চিটফান্ড সংস্থা রয়েছে সেখান থেকে সরাসরি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন রাজু সাহানি। আর কারা এর সঙ্গে জড়িত জানতে তাঁকে ম্যারাথান জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন, দাবি করেছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা। যদিও ধৃতের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তিনি একটি নির্দিষ্ট দল করেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। রাজু সাহানির আইনজীবীর দাবি, রাজু যানতেন না যে এই চিটফান্ড সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর সৌম্যদীপ ভৌমিক পলাতক রয়েছেন। তিনি রাজুর বন্ধু ছিলেন। রাজুর যেহেতু রিয়েল এস্টেটের একাধিক ব্যবসা রয়েছে, তাই সেই কাজে বছর তিনেক আগে ৩০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধও করে দিয়েছিলেন। তার রসিদও আছে। সেই রসিদ তিনি আদালত চাইলে পেশ করতে পারেন বলে জানান। এদিন সেই রসিদ পেশও করা হয়। প্রসঙ্গত, চিটফান্ডকাণ্ডে হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা রাজু সাহানিকে হালেই গ্রেফতার করে সিবিআই। ধৃতের বাবা লক্ষ্মণ সাহানি বাম আমলে হালিশহরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন। কয়েকবছর আগে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সেইসঙ্গে দলবদল করেন ছেলেও। গত পুরসভা নির্বাচনে হালিশহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:বীরের সম্মানে কেষ্টকে ফিরিয়ে আনতে হবে, সমাবেশ থেকে বার্তা মমতার