হিন্দোল দে, গৌতম মণ্ডল ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : আজ মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে ডুব দিলেন চারমন্ত্রী। অন্য়দিকে খেজুরিতে মন্দিরে পুজো দিলেন বিরোধী দলনেতা।একে অপরকে আক্রমণও করল তৃণমূল ও বিজেপি। যদিও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ইস্যুতে দু'পক্ষকেই বিধেছে সিপিএম। দুয়ারে, রাম মন্দিরের উদ্বোধন।অযোধ্যাজুড়ে চলছে তারই প্রস্তুতি! সেজে উঠছে অযোধ্যা! এই প্রেক্ষাপটে বিজেপির বিরুদ্ধে রামকে নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। কিন্তু মকরসংক্রান্তিতে যুযুধান দুই শিবিরকেই দেখা গেল ধর্মাচারণে ব্যস্ত থাকতে। তবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি প্রসঙ্গে একে অপরকে আক্রমণ করতেও ছাড়লেন না। এদিন ভোরে গঙ্গাসাগরে একসঙ্গে পুণ্যস্নান সারেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
 
 পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায় , পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু।  পরিষদীয় মন্ত্রী   শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, রথ দেখা, কলা বেচা দুটোই হয়। দায়িত্ব পালনও হয়, আবার মহাস্নানও হয়। এই দুটো কারণের জন্যই আসা। আমি তিনটে কুম্ভ করেছি। এত সুন্দর অ্যারেঞ্জমেন্ট ভারতবর্ষের আর কোথাও হয় না। গঙ্গাসাগরে ৪ মন্ত্রীর পুণ্যস্নান খোঁচা বিজেপির। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন,তৃণমূলের মন্ত্রীরা যখন গঙ্গাসাগরে, তখন খেজুরিতে গঙ্গা পুজো করতে দেখা যায়  শুভেন্দু অধিকারীকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এ রাজ্য রাম রাজ্য হবে। রাম রাজ্য মানে মাথায় ছাদ, পেটে ভাত, হাতে কাজ, এটাই হল রাম রাজ্য। রবিবার নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় শিব মন্দির সাফাই করেন তিনি। আর সোমবার পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে খেজুরির নিজ কসবা এলাকায় ভীমেশ্বর মন্দিরে যান তিনি। শিব পুজো ও মা গঙ্গাকে পুজো দিয়ে বিলি করেন প্রসাদ। 


পরিবহণমন্ত্রী  স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন,বিজেপি, যে দল হিন্দু ধর্মের একেবারে সত্যনাশ করছে। হিন্দু ধর্মকে নিয়ে রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে আজকে হিন্দু ধর্মের সবথেকে বড় অপমান করে চলেছে এই বিজেপি দল এবং নরেন্দ্র মোদির সরকার। তৃণমূল-বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ বামেদের। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, বাংলার মাটি রামকৃষ্ণের মাটি-বাংলার মাটি বিবেকানন্দর মাটি! বাংলার মাটি নজরুলের মাটি।তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মাটিতে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মিলন...কখনওই বাঞ্ছিত নয়।যে দলই করুক না কেন, যে ধর্মকে নিয়েই ভোটের রাজনীতি করুক না, তা  কখনওই কাম্য় নয়!
 
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস বলতেন, 'আমি যার যা ভাব তার সেই ভাব রক্ষা করি। বৈষ্ণবকে বৈষ্ণবের ভাবটি রাখ তে বলি, শাক্তকে শাক্তের ভাব। আমি সব ভাবই কিছু কিছু করেছি—সব পথই মানি।'শ্রী রামকৃষ্ণদেবের এই ভাবের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে শিকাগো ধর্ম মহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে অর্থে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসেননি। কিন্তু তিনিও শ্রীরামকৃষ্ণের এই ভাবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।


আরও পড়ুন, পোস্ট অফিসে ৪ কোটির দুর্নীতি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতেই ডাক কর্মী বললেন..


জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে তিনি বলেছিলেন, 'ধর্মীয় ধ্বংসাত্মক এমন ঊষর একটি যুগেও তিনি আমাদের আধ্যাত্মিক সম্পদের সারসত্য উপলব্ধি করেছেন, বহু সাধনার আপাত পরস্পরবিরোধী দ্বন্দ্বমুখর ধারাগুলি মিলিত হয়েছে তাঁর হৃদয়ের প্রশস্ততায়, তাঁর আত্মার সারল্য চিরকাল ধিক্কার জানায় পণ্ডিত আর ধর্মবেত্তাদের সমস্ত আড়ম্বর আর আত্মম্ভরিতাকে।'আজকের বাংলা কোন পথে হাঁটবে? প্রশ্ন অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এরইমধ্য়ে সোমবার মকর সংক্রান্তিতে অযোধ্যায় গিয়ে সরযূ নদীতে পুণ্যস্নান করেন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি অজয় রায়।এরপর হনুমানগড়ির মন্দিরে গিয়ে পুজোও দেন তিনি।