শিবাশিস মৌলিক ও শুভেন্দু ভট্টাচার্য: বয়স কি কোনও বাধা? যদি দুই চোখে স্বপ্ন থাকে? আর মনে থাকে কোনও একটি আদর্শের প্রতি স্থির বিশ্বাস? এই প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে বছর তিয়াত্তরের এক 'যুবকে'র কাছে। তিনি পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) কালনার প্রভাত দাস। কালনা থেকে কোহিমা (Kohima) হয়ে কোচবিহার (Cooch Behar)। রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার (Bharat Jodo Nyay Yatra) সঙ্গী হয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন তিয়াত্তর বছরের কংগ্রেস কর্মী প্রভাত দাস (Prabhat Das)। গোটাটাই সাইকেলে। তাঁর মনে রয়েছে বিভেদহীন দেশ গড়ার স্বপ্ন, জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার এই মানুষটি।


তিয়াত্তরের এই তরুণ দেখেন ভেদাভেদহীন ভারত গড়ার স্বপ্ন। তাই বয়সের বাধাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সাইকেলে চড়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার সঙ্গী হয়ে তিনিও চলেছেন মণিপুর থেকে মুম্বইয়ের পথে। প্রভাত দাস বলছেন, 'বয়সটা তো একটা সংখ্যামাত্র। আজকে ভারতে, আমাদের দেশে বড় প্রয়োজন হয়েছে মানুষের প্রতিবাদ করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, ন্যায়ের প্রতি দাঁড়ানো।'


গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা থেকে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০৩ কিলোমিটার। এই পথে ২৪ দিন সাইকেল চালিয়ে কালনা থেকে কোহিমায় পৌঁছেছিলেন সত্তোরোর্ধ্ব কংগ্রেস কর্মী প্রভাত দাস। মণিপুরে (Manipur) পরিস্থিতি ভাল নয় বলে ঢোকার অনুমতি পাননি। তাই রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় তিনি সামিল হন নাগাল্যান্ড থেকে। তারপর ন্যায়ের দাবিতে অনবরত ঘুরছে সাইকেলের চাকা, তাঁর সাইকেল এখন কোচবিহারে। প্রভাত দাস বলছেন, 'ডিমাপুরে ১৩ তারিখ বিকেলে গিয়েছি। ১২-১০ ঘণ্টা যেদিন যেমন পেরেছি সাইকেল চালিয়ে ডিমাপুরে হাজির হয়েছিলাম। চড়াই-উতরাই ভেঙে হেঁটে হেঁটে সাইকেল ওপরে তুলতে হয়েছিল, কোহিমার অফিসে ছিলাম।'


ইদানিং ভারত হোক কিংবা বাংলা- সর্বত্র রাজনীতির অলিন্দে ক্ষমতা দখলের লড়াই। কখনও অর্থবানদের প্রবল প্রতাপ, কখনও আবার চোখের নিমেষে দলবদল। কী ভাবেন তিনি? প্রভাত দাস বলছেন, 'মানুষের রায় নিয়ে অন্য দিলে যাওয়া যে উচিত না সেটা ভাবা উচিত। আমি তার প্রতিবাদ করে যাচ্ছি যে এটা ঠিক না।' মুম্বইতে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শেষ হওয়ার পরে সেখান থেকে বর্ধমান পর্যন্ত দলের প্রচার করতে করতে ফেরার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন? তিনি বললেন, 'এই কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও আক্ষেপ থাকবে না।'


রাজনীতির ময়দানে দলবদল-দুর্নীতি-হিংসার ঘটনার ভিড়ে শুধুমাত্র দলকে ভালবেসে এই বয়সে এতটা পথ পাড়ি। এক সাধারণ কংগ্রেস কর্মীর এমন কাজ কি কিছুটা হলেও আদর্শ কথাটার প্রতি বিশ্বাস জাগায় না?


আরও পড়ুন: বাধা হয়ে দাঁড়াল নিয়ম, বাধ্য হয়েই বক্সিংকে বিদায় জানালেন মেরি কম