সৌভিক মজুমদার, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: SSC মামলায় বুধবারই CBI-এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আগামী সপ্তাহে ফের এই মামলায় তাঁকে তলব করা হল। এ প্রসঙ্গে তোপ দেগেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
কংগ্রেস নেতা বলেন, "আমি যদি চুরি না করি ভয় কীসের আমার? মানুষের টাকা চুরি করেছে। আবার যাতে সেই চুরি ধরা না পরে, সেই জন্য সেই মানুষের টাকায় কোর্টে গিয়ে তার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। এটাই বাংলার মা মাটি মানুষের সরকারের নতুন নমুনা। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এগুলোকে গরাদে ভরে দেওয়া দরকার। আমি মুখ্যমন্ত্রী হলে এতক্ষণে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে গরাদে ভরে দিতাম।"
CBI সূত্রে দাবি, বুধবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর অনুমোদনে উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছিল। আর সেই কমিটির বিরুদ্ধেই বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের মধ্যে একজন রাজ্যের মন্ত্রীর মেয়েও (অঙ্কিতা অধিকারী) রয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি কী জানেন? উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, তিনি কমিটি গঠন করলেও, সেই কমিটির ওপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ তাঁর ছিল না! যা হয়েছে পুরোটাই সরকারি নোট শিটে রয়েছে।
এখানেই সিবিআইয়ের প্রশ্ন, তাহলে SSC’র উপদেষ্টা কমিটির ওপর কার নিয়ন্ত্রণ ছিল? উপদেষ্টা কমিটিকে কি বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল? সিবিআই সূত্রের আরও দাবি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে অসঙ্গতি রয়েছে। তাই ফের তলব করা হয়েছে। SSC দুর্নীতি মামলার শুনানিতে এদিন সেই উপদেষ্টা কমিটির প্রসঙ্গ তুলে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, SSC’র উপদেষ্টা কমিটিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের OSD এবং PA ছিলেন। তাঁরা সরাসরি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে রিপোর্ট করতেন। তাই এই কমিটির বিষয়ে পার্থ বাবু কিছু জানতেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। সব দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হোক। এটাই আমি চাই।
এই মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি আগেই নিজেদের রিপোর্টে SSC’র এই উপদেষ্টা কমিটিকে বেআইনি বলে দাবি করেছে। এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফের সিবিআই তলবের মধ্যেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে একটি মিছিল ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে। বৃহস্পতিবার নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই পোস্ট। যেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবির ওপর লেখা ‘হোক প্রতিবাদ’। যেখানে সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে কুত্সা ও অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে, শুক্রবার বিকেল চারটেয় এক প্রতিবাদ মহা মিছিলের ডাক দেয় তৃণমূল। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের বিরোধিতা করেই আন্দোলনে নামছে তৃণমূল?
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার দুপুরে ফেসবুক পোস্টে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী লেখেন, অতি উত্সাহী হয়ে কেউ কেউ ফেসবুকে হোক প্রতিবাদ নাম করে পোস্ট করছেন। অবিলম্বে এই ধরনের পোস্টগুলি সরিয়ে ফেলুন। মা মাটি মানুষ সরকারের উন্নয়নের ১১ বছরের সমর্থনে মিছিল। কিন্তু অন্য কোনও বিষয় যেন না আসে। আমি সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্মীদের কাছে সেই অনুরোধ জানালাম। এরপরেই বদলে যায় তৃণমূলের মিছিলের ইস্যু। প্রতিবাদ মহা মিছিল বদলে হয়ে যায় অভিনন্দন যাত্রা। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূলের ঘোষিত অবস্থান প্রত্যেকদিন একরকম থাকে। কারোর চাপে এই মিছিল বদলে গেল, নাকি স্বতঃপ্রণদিতভাবে কেউ বদলে দিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যে চর্চা চলছে।" সব মিলিয়ে ফের একবার দুর্নীতি ও সিবিআই তদন্ত ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।