শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ-হীন জীবন যেন কল্পনাতীত। টেকনোলজির দুনিয়ায় বিদ্যুৎ ছাড়া জীবনযাত্রা ভাবাই যায় না। তবে স্বাধীনতার পর থেকে বিদ্যুৎহীনই রয়েছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ দু'নম্বর ব্লকের  ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ফলিমারি খামারপাড়া এলাকা।

  


তবে এবার এই এলাকার ৫টি বুথের মানুষ পেতে চলেছে বিদ্যুৎ। আর দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণ হওয়ায় উৎসবের চেহারা এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকার মানুষের অপেক্ষারত ছিল, অবশেষে যখন বিদ্যুতের খুঁটি এসে পৌঁছয় গ্রামে ততক্ষণে উৎসবের চেহারা নিয়েছে এলাকা। আতশবাজি ফাটিয়ে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে চলল উৎসব পালন। 


তবে এই বিদ্যুৎ আনার বিষয়টা খুব বেশি সহজ ছিল না, আসাম সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর সম্ভব হয়েছে বলেই খবর। এই এলাকাটি মূলত কোচবিহারের মূল ভূখণ্ড থেকে রায়ঢাক ও সঙ্কোশ নদী দিয়ে বিচ্ছিন্ন। শুধুমাত্র আসামের সঙ্গেই এক সীমান্ত খোলা। এই পরিস্থিতিতে নদী পেরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হলেও তা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল মাঝেমধ্যেই, অথবা চুরি হয়ে যাচ্ছিল ব্যাটারি ও অন্যান্য সামগ্রী। ফলে এলাকার মানুষ যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমির এই থাকতে হত। 


অবশেষে আসাম সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে রাজ্য সরকার। এরপর আসাম থেকে বিদ্যুৎ লাইন এই গ্রামে পৌঁছবে। অন্যদিকে কোচবিহারের বক্সিরহাটে বেশ কিছু বাড়ি রয়েছে যা আসামের অংশ, সেখানেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে, একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেই বাড়িগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে। এই ভাবেই দুই রাজ্যের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে অন্ধকার দূর হয়েছে ফলিমারী গ্রামের প্রায় সাত থেকে আট হাজার মানুষের। 


দীর্ঘদিন থেকেই এখানে বিদ্যুতের দাবি করে আসছিল সাধারণ মানুষ, হয়েছে আন্দোলনও। কখনও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিককে ঘিরে হয়েছে বিক্ষোভ আবার কখনও বিজেপির সাংসদ জন বার্লা বিক্ষোভের মুখে পড়ে গ্রামেই ঢুকতে পারেননি। 


আরও পড়ুন, শাড়িতেই গোটা রামায়ণ, নিপুণ শিল্পকর্ম নিয়ে অযোধ্যার পথে পাড়ি বাংলার তাঁতশিল্পীর


অবশেষে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।  অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই এই গ্রামের চিন্তা কেউ করেনি, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের চেষ্টায় অবশেষে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। 


এলাকার বাসিন্দারা জানান দীর্ঘদিন থেকে তারা এই নিয়ে আন্দোলন করছিল এমনকি ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল, অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও আসাম সরকারের প্রচেষ্টায় তাদের দাবি পূরণ হয়েছে। তাই দুই সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।