সুদীপ চক্রবর্তী, রানা দাস ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: মঙ্গলবার চল্লিশজন অযোগ্য প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে SSC, যারা ভুল পথে চাকরি পেয়েছিলেন। সেই তালিকায় থাকা প্রার্থীদের সন্ধানে অন্তর্তদন্ত চালিয়ছে এবিপি আনন্দ। প্রত্যেকের স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার অবধি তাঁরা এলেও, তালিকা প্রকাশের পর, বুধবার থেকে আর কেউ আসেননি।


প্রথমে ১৮৩। তার পর আরও ৪০। ইতিমধ্যে মোট ২২৩ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন, যাঁরা বেআইনি পথে চাকরির সুপারিশ পেয়েছিলেন। 


মঙ্গলবার আদালতে CBI জানিয়েছিল, কোথাও ০ পাওয়া প্রার্থীর নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৩। কোথাও ১ পাওয়া প্রার্থীর নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫১। অভিযোগ, মঙ্গলবার এসএসসি’র তরফে যে ৪০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয় তাঁদের ক্ষেত্রেও এভাবেই OMR শিটে কারচুপি করেই চাকরি দেওয়া হয়েছিল।

SSC-র তালিকায় ‘অযোগ্য ৪০’ জনের খোঁদে অন্তর্তদন্তে নেমেছিল এবিপি আনন্দ। তাতে জানা যায়, রায়গঞ্জের দেবীনগর গয়ালাল রামহরি গার্লস হাইস্কুলে ২০১৯ সাল থেকে বাংলা পড়াচ্ছিলেন প্রাপ্তি চৌধুরী। মঙ্গলবার স্কুল সার্ভিস কমিশন যে ৪০ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ৩১ নম্বরে নাম রয়েছে প্রাপ্তির।


মঙ্গলবার অবধি স্কুলে গেলেও, তালিকা প্রকাশের পর বুধবার আর স্কুলে আসেননি তিনি। কিছু জানানওনি! অবাক তাঁর সহকর্মী থেকে আত্মীয়রা। দেবীনগর গয়ালাল রামহরি গার্লস হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রাজশ্রী দাস বলেন, "সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে শুনেছি। আমাদের কাছে কিছু আসেনি। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না। গতকাল অবধি স্কুল করেছে। আজ নোটিস ছাড়া স্কুলে আসেননি।"


প্রাপ্তির আত্মীয় শেখর চৌধুরী বলেন, "লোকের মুখে শুনেছি। সকালে বাড়িতে এসে দেখি ওরা নেই। কী করে হল বুঝতে পারছি না।"


SSC-র ৪০ জনের প্রার্থী তালিকায় ৬ নম্বরে নাম রয়েছে রুকসানা খাতুনের। এবং ১৮ নম্বরে গোপাল সাহার। রুকসানা ইসলামপুরের মাদারিপুর হাইস্কুলে ২০১৯ থেকে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছিলেন। আর গোপাল সাহা পড়াতেন শীতগ্রাম বিদ্যাভবনে। দু’জনই মঙ্গলবার অবধি স্কুলে এলেও, অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা বেরনোর পর বুধবার আর সেই পথ মাড়াননি।


'অযোগ্য' প্রার্থীর দিদি তুলসি সাহা বলেন, "আজকে সকালে বাইরে গেছে। কোথায় গেছে জানি না। কবে ফিরবে জানি না। কালও স্কুলে গেছিল। তালিকার বিষয়টি জানা নেই।" এ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দিনাজপুরের স্কুল পরিদর্শক মুরারিমোহন মণ্ডল বলেন, "আমি এসএসসি’র ওয়েবসাইটে তালিকা দেখেছি। জেলায় কতজন আছেন, তা বলা সম্ভব নয়।"


SSC-র তালিকার ৫ নম্বরে নাম রয়েছে রিঙ্কু দেবনাথের। তিনি পূর্ব বর্ধমানের রাজাপুর ভাতশালা ধীরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠে ২০১৯ সাল থেকে ইতিহাস পড়াচ্ছিলেন। বাড়িতে গিয়ে রিঙ্কুর দেখা পাওয়া যায়নি। তাঁর স্বামী ছবি তুলতে বাধা দেন। জানান, দেখা করা যাবে না। 


ডোমকলের বাসিন্দা আনোয়ার মণ্ডল মধুরকুল হাইস্কুলে ইতিহাসের শিক্ষকের চাকরি করতেন। মঙ্গলবার অবধি স্কুলে এসেছিলেন। তারপরই দেখা যায় SSC-র তালিকায় ৭ নম্বরে রয়েছে তাঁর নাম। বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। কী ভাবে বেআইনি সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল? কারা দিয়েছিলেন? কেন দিয়েছিলেন? এগুলোর উত্তর এখনও বাকি।