অরিন্দম সেন, কালচিনি(আলিপুরদুয়ার) : ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ সবে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। কিন্তু, যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে, চিকিৎসার মতো জরুরি পরিষেবা পেতে আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের অন্তর্গত বক্সা পাহাড়ের মানুষের এখনও কালঘাম ছোটে ! তাঁদের নেমে আসতে হয় প্রায় ৩৫ কিমি দূরত্বে কালচিনির লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল অথবা প্রায় ৩১ কিমি দূরত্বের আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। ফলে, রোগীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় সেখানকার মানুষকে। এই পরিস্থিতিতে দেখা গেল আশার আলো। দুর্গম পাহাড়ি পথে এবার সঙ্কটজনক রোগী ও অন্তঃসত্ত্বাদের বহনের মতো পরিষেবা দেবে "পালকি অ্যাম্বুলেন্স"। অভিনব এই উদ্যোগে খুশি বক্সা পাহাড়ের মানুষ। 


বাঁশে কাপড় ঝুলিয়ে রোগী বা অন্তঃসত্ত্বা বহন করাই ছিল এখানকার একমাত্র অবলম্বন। এবার আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের বক্সা পাহাড়ের ১১টি পাহাড়ি গ্রামে জরুরি পরিষেবা দেবে "পালকি অ্যাম্বুলেন্স"। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা। উপস্থিত ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা। বক্সা পাহাড়ের জিরো পয়েন্টে এর শুভ সূচনার পর এই "পালকি অ্যাম্বুলেন্স" কাঁধে বয়ে বক্সা দুয়ারের কমিউনিটি হেল্থ ইউনিটের দিকে বয়ে নিয়ে যান আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক এবং কালচিনির বিডিও স্বয়ং। 


কালচিনির(Kalchini) একটি সংস্থার উদ্যোগে নির্মিত এই "পালকি অ্যাম্বুলেন্স" বহন করবেন তাঁদেরই সদস্য ৪ পালকি বাহক। এই মুহূর্তে একটি পালকির মাধ্যমে বক্সা দুয়ার থেকে পরিষেবা দেওয়া শুরু হল। তবে, আগামীতে আরও তিনটি পালকি এই পরিষেবা দেবে বক্সা পাহাড়ের দুর্গম আদমা, চুনাভাটি এবং লেপচাখা গ্রাম থেকে। শাল কাঠের ফ্রেমে তৈরি এই পালকির নিচের অংশ তৈরি হয়েছে গামারি কাঠ দিয়ে। পালকি যতটা সম্ভব হাল্কা রাখার জন্য চারপাশ ঢাকা হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম প্লেনশিট দিয়ে। যাতে বৃষ্টির জলও প্রবেশ করতে না পারে।  প্রবেশের জন্য দরজাও রাখা হয়েছে একপাশে। পালকির অন্দরে নিরাপদ মাতৃত্বের বার্তা দেওয়া বিভিন্ন ছবি রয়েছে। এর পাশাপাশি জরুরি পরিষেবায় সেখানে রাখা হবে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, স্যালাইন, অক্সিজেন এবং গরম জল। পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা বহনের যাত্রাপথে থাকবেন একজন প্রশিক্ষিত দাইমা। 


উল্লেখ্য, আলিপুরদুয়ার(Alipurduar) জেলার কালচিনি ব্লকের অন্তর্গত বক্সা পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২৬০০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়ে ১১-টি গ্রামের প্রায় ৩০০০ মানুষের বসবাস। মূলতঃ ডুকপা জনজাতির এই গ্রামগুলি স্বাধীনতার বহু বছর পরও ছিল অন্ধকারেই। ২০০১৭/১৮ সালে প্রথম সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও যোগাযোগ ব্যাবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি সেভাবে। ফলে বহু ক্ষেত্রেই এইসব পাহাড়ি গ্রামের মানুষদের জরুরি পরিষেবা পেতে হলে নেমে আসতে হয় প্রায় ৩৫ কিমি দূরের কালচিনি ব্লকের লতাবাড়ি রুরাল হাসপাতাল অথবা প্রায় ৩১ কিমি দূরের আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। মাঝে সনতলাবাড়িতে একটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও তার দূরত্ব প্রত্যন্ত আদমা গ্রাম থেকে প্রায় ১১ কিমি। ফলে, পাহাড়ি এই রাস্তার বেশিরভাগ অংশই হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। সমস্যায় পড়তে হয় রাত-বিরেতে জরুরি পরিষেবা পেতে হলে। সেক্ষেত্রে এইসব প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জরুরি রোগী অথবা অন্তঃসত্ত্বাদের স্ট্রেচার অথবা কাপড়ের সাহায্যে বাঁশে ঝুলিয়ে হাসপাতালে বয়ে আনতে হয়। এই পরিস্থিতিতে, গত ২৭ নভেম্বর প্রথম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাদ পায় বক্সাদুয়ার। এবার "পালকি অ্যাম্বুলেন্স"। তাতে রোগী বহন কিছুটা মসৃণ হওয়ায় স্বস্তিতে পাহাড়ি গ্রামের ডুকপা সম্প্রদায়ের মানুষজন।