রাজীব চৌধুরী ও শিবাশিস মৌলিক, মুর্শিদাবাদ: আবাস যোজনায় (PM Awas Yojana) দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে ইস্তফা দিলেন তৃণমূল (TMC) পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতেরই প্রধান, উপপ্রধান-সহ ১৭ জন তৃণমূল সদস্য! কান্নায় ভেঙে পড়লেন খোদ তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত প্রধান। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ভরতপুরের ঘটনায় অস্বস্তিতে শাসকদল। যা নিয়ে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।

  


ভরতপুরের তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত প্রধান সৈয়দ নাসিরুদ্দিন বলেন, "বিভিন্ন ওয়ার্ডে, সেখানে দেখছি, মাটির বাড়ি, কেউ হয়তো ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করে, মাটি খুলে পড়ছে, সেরকম বাড়ি, তা সেই সব লোকদের চোখের জলের জন্য সমস্ত আমাদের পঞ্চায়েতের তরফ থেকে প্রত্যেকে বুকে ব্যথা নিয়ে আজকে কিন্তু আমরা এসেছি। আমরা চাই সাধারণ গরিব মানুষ, তারা ঘরটা পাক।" 


পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সামনে এসেই চলেছে। আবাস যোজনায় দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ। যাতে নাম জড়াচ্ছে একের পর এক তৃণমূল নেতার। গরিব মানুষ মাথার ওপর ছাদ পাচ্ছে না। আর যাঁদের পাকা বাড়ি, তাঁদের নাম আবাস-তালিকায় জ্বলজ্বল করছে বলে, অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন জায়গায়। এতদিন বিরোধীরা তো এনিয়ে সরব ছিলেনই! এবার মুর্শিদাবাদে আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ও জনরোষের ভয়ে। গণইস্তফা দিলেন মালিহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ ১৭ জন তৃণমূল সদস্য। 


আরও পড়ুন, লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট, বড়দিনে কেক বিলি করে পঞ্চায়েত প্রচার শুরু তৃণমূলের


সূত্রের দাবি, তৃণমূল পরিচালিত এই গ্রাম পঞ্চায়েতে আবাস যোজনা প্রকল্পে ১ হাজার ৯১৭ জনের নাম ছিল। সম্প্রতি নতুন যে তালিকা এসেছে, তাতে ৮৬২ জনের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানেই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। 


তৃণমূল প্রধান বলেন, "এমনও দেখা যাচ্ছে যে, বেড়ার বাড়ি। অনেকে হয়তো শীতে থরথর করে কাঁপছে, সেই মানুষগুলো চিৎকার করে আমাদের সামনে কাঁদছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। কীভাবে আমি তাদের ঘর দেব?" শনিবার তৃণমূলের প্রধান, উপপ্রধান-সহ ১৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য বিডিও অফিসে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। 


তৃণমূল উপপ্রধান বলেন, "মাটির বাড়ি, তারা ঘর পাচ্ছে না, তাহলে কী করব বলুন। কারা ঘর পাচ্ছে না। আমাদের গ্রামেই, সব ওয়ার্ডে। তারা তো পাচ্ছে না। তাদের নাম বাদ গেছে। তাহলে তারা তো আর পাচ্ছে না। যাদের পাকা বাড়ি, তারা পাচ্ছে। এবার আমাদের তো গাল দেবে। বলবে, তাহলে মেম্বারই করছে এগুলো। সেইজন্যই আমরা করছি।" 


পঞ্চায়েত ভোটের আগে, এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতিতে। তৃণমূল অবশ্য সাফাই দিচ্ছে, তালিকা তৈরি করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ আবু তাহের খান, "যে লিস্ট তৈরি হয়েছে, সেগুলো সরকারি কর্মচারীরা করেছেন। সেখানে কিন্তু প্রধানদের সেই ভূমিকা ছিল না। প্রধানরা ডাইরেক্ট জড়িয়ে ছিলেন না। যদি কোথাও কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা দেখব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।" 


তৃণমূল পরিচালিত মালিহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে শুক্রবারই বৈঠকে বসে গ্রামসভা। কিন্তু সেখানে আবাস প্রকল্পের তালিকা অনুমোদন নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।