সুদীপ চক্রবর্তী, অনির্বাণ বাগচী ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে ঐক্য় নিয়ে, সিপিএম-কংগ্রেসের অন্দরের অসন্তোষ প্রকাশ্য়ে চলে এল। মুখ খুলছেন একের পর এক নেতা-কর্মী। অন্য়দিকে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, ভোট হিংসায় নিহত সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীদের পরিজনরা।


UPA নয় এবার INDIA. মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করল বিজেপি-বিরোধীদের মহাজোট। যার মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন রাহুল গাঁধীরা। কিন্তু অন্য়দিকে, এই জোটের ছবি নিয়ে এরাজ্য়ে সিপিএম এবং কংগ্রেসের অন্দরেই পুঞ্জীভূত হচ্ছে। অসন্তোষের কালো মেঘ। যেমন হাওড়ার পাঁচলার ঘড়ছাড়া সিপিএম কর্মী শেখ আবাইদুল্লা। ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে মোদি বিরোধের নামে বামেদের জোট হলে, দরকার হলে বিজেপি হয়ে যাব। এমন ঘটনায় তিনি ব্যথিত বলেও লিখেছেন তিনি।


শুধু সিপিএম নয়, ক্ষোভের সুর কংগ্রেসের অন্দরেও। রাহুল গাঁধীকে ট্যাগ করে একের পর এক ট্যুইট ও ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরীও। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী বলেন, 'যেখানে পঞ্চায়েতে এত লোক মারা গেল, সেখানে এই বৈঠক। আমাদের বাড়িঘর লুঠ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের প্রাণের ভয়, সম্ভ্রমের ভয়। সেখানে এক মঞ্চে এভাবে মিটিং না করলেই মনে হয় ভাল হতো। ক্ষোভের সুর কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেন, 'আমাদের লড়াই চলবে, যাঁরা বলেছিল কংগ্রেস পচা ডোবা, তাঁরাই এখন কংগ্রেসের পচা ডোবায় ডুব দিচ্ছে।'


মাত্র কিছুদিন আগেই এরাজ্য়ের পঞ্চায়েত ভোট-পর্বে কংগ্রেসের ৭ জন এবং সিপিএমের ৪ জন খুন হয়েছেন। সবক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই আবহেই বেঙ্গালুরুতে মমতার পাশে দেখা গেল রাহুলকে। মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সীতারাম ইয়েচুরিকে দেখে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারছে না বঙ্গে ভোট-সন্ত্রাসে নিহতদের পরিবার।


পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন ইসলামপুরে খুন হন কংগ্রেস কর্মী অরবিন্দ মণ্ডল। পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণা মণ্ডল বলেন, 'এই মিটিংয়ের তো কোনও মানে হয় না। এটা তো মানুষ মেরে ফেলার ভোট। আমি শাস্তি চাই। আমার তো দিন চলবে না, তার দায়িত্ব কে নেবে। মিটিং করে কী হবে?'


একই বক্তব্য, চোপড়ার নিহত সিপিএম সমর্থক মনসুর আলমের পরিবারেরও। নিহত সিপিএম সমর্থকের দাদু মহম্মদ গিয়াসুদ্দিন বলেন, 'এটা জাতীয় স্তরের বিষয়। জাতীয় স্তরে মিল হলেও, এটা আমরা মন থেকে মানছি না। মানব না। পশ্চিমবঙ্গে লুঠ করছে, এতগুলো মানুষ মারা গেল। তার কী হবে।'


সব মিলিয়ে ব্য়াঙ্গালোরে বিরোধী মহাজোটের আত্মপ্রকাশের দিনেই, বাংলায় প্রকাশ্য়ে এল তা নিয়ে অসন্তোষের ছবি।


আরও পড়ুন: এক আসনে ২ জন জয়ী প্রার্থী! শংসাপত্র 'বিভ্রাট' ঘিরে উঠছে প্রশ্ন