সন্দীপ সরকার, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও প্রবীর চকর্বর্তী , কলকাতা  : ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে অ্যাডিনো ভাইরাস ( Adenovirus )  ! শিশু হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে আক্রান্তের ভিড়। একের পর এক হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও অ্য়াডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্য়ু মিছিল। মঙ্গলবার সকালে বি সি রায় হাসপাতালে ( BC Roy Hospital )  মৃত্যু হয় বালির বাসিন্দা, ৫ বছরের এক শিশুকন্যার



জ্বর-সর্দি-কাশি হওয়ায়, গত শুক্রবার শিশুকে উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। রবিবার বি সি রায় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা ওই শিশুকন্যাকে। এরপর মঙ্গলবার সব শেষ। ডেথসার্টিফিকেটে উল্লেখ রয়েছে নিউমোনিয়ার।

বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই নিয়ে ২ মাসে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১৩ জন শিশুর। শিশুদের দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি কারণ হিসেবে একাধিক ভাইরাসের সম্মিলিত আক্রমণকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অ্যাডিনো ভাইরাসের সঙ্গে কেউ প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বি-তেও আক্রান্ত। মাইক্রোবায়োলজিস্ট দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন, এখন অ্যাডিনোভাইরাসের সঙ্গে অনেকের অন্য ভাইরাসও সহাবস্থান করছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও থাকছে শরীরে। 


মঙ্গলবার বিসি রায় হাসপাতাল পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। বর্তমানে শিশুদের চিকিৎসার জন্য বুকের এক্সরে -এর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের । কিন্তু এই সব কিছু মধ্যেই বিসি রায় হাসপতালে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল এক্সরে মেশিন। পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বহু রোগীর পরিবারকে বিপাকে পড়তে হয়।

বিসি রায় হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক্স রে মেশিনের চাপ বেড়েছে। দিনে ১৫০-এর বেশি এক্স রে করা হচ্ছে। তাই মেশিনকে বিশ্রাম দিতে হচ্ছে।


এই পরিস্থিতিতে একের পর এক শিশু মৃত্যুর জেরে সরকারি হাসপাতালে শিশুরোগ চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করল স্বাস্থ্য দফতর। আরও একবার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে ফিভার ক্লিনিক।  স্বাস্থ্য কর্তারা আশা করছেন, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।  


এর আগে রাজ্য সরকার অ্যাডিনো পরিস্থিতিতে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্য-সচিব এবং মুখ্যসচিবের বৈঠক হয়। সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকে উদ্বেগপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিডের সময় যেভাবে কাজ করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও যেন সেই রকম ব্যবস্থা করা হয়। অক্সিজেনের অভাব যাতে না হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনই, ১০ দফা অ্যাডভাইসরি জারি করে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়, 



  • শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশুদের জন্য ২৪ ঘণ্টার ক্লিনিক করতে হবে।

  • যে যে হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে শিশু বিভাগ আছে, সেখানে আলাদা আউটডোর চালু করতে হবে। যাতে সাধারণ বর্হিবিভাগে এই সব রোগীদের অপেক্ষা করতে না হয়।

  • হাসপাতাল প্রধান বা অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি আক্রান্ত শিশুদের রোগীকে রেফার করা যাবে না।

  • ভেন্টিলেটর ও অন্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখতে হবে।

  • হাসপাতাল প্রধান, অধ্যক্ষ বা নার্সিং বিভাগের প্রধানকে নিজেদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

  • শিশু বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে লাগাতে হবে।

  • শিশুদের জনবহুল এলাকায় না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে মাস্ক ব্যবহার করতে।

  • অ্যাডভাইসরিতে আরও বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

  • এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৫টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

  • বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।