পার্থপ্রতিম ঘোষ, শিবাশিস মৌলিক ও আশাবুল হোসেন: জলঙ্গি, রানিনগর থেকে ভগবানগোলা- মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক জায়গাতেই নেই কোনও কাঁটাতারের বেড়া। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই এলাকা দিয়ে অনেক অনুপ্রবেশ ঘটেছে ভারতে। আর এখানেই আশঙ্কা, এদের মধ্যে জঙ্গিরাও এদেশে ঢুকে পড়েনি তো? এখনও পর্যন্ত আনসারুল্লা বাংলা টিমের একাধিক ধৃত জঙ্গির মুর্শিদাবাদ কানেকশন বেরনোয় উঠছে প্রশ্ন। (India-Bangladesh Border)
বাংলাদেশ যখন ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার যুদ্ধের জিগির তুলে চলেছে। তখনই এরাজ্য় থেকে পর পর গ্রেফতার হচ্ছে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের জঙ্গি। আর এখনও অবধি, এই জঙ্গিদের সঙ্গে বারবার যোগ মিলেছে যে জেলার, তার নাম মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেফতার হয়েছে আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গি মিনারুল শেখ এবং মহম্মদ আব্বাস। (Bangladeshi Infiltrators)
কেরল থেকে ধৃত জঙ্গি শাদ রাডিও ১০ বছর ধরে মুর্শিদাবাদেই ঘাঁটি গেড়ে ছিল। আর অসম থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি নুর ইসলাম মণ্ডল মুর্শিদাবাদে এসেছিল গোপন বৈঠক করতে। এই তথ্য়ই গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে, বার বার মুর্শিদাবাদ কেন? ধৃত জঙ্গিদের এতজনের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের যোগ কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ কাঁটাতারহীন সীমান্ত।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যখন বাংলাদেশি নাগরিকদের গ্রেফতার খবর সামনে আসছে, সেই সময়ই কাঁটাতারের বেড়া না থাকার বিষয়টি চোখে পড়ছে। মুর্শিদাবাদের বামনাবাদ সীমান্তের এমনই পরিস্থিতি। অনেকে বলছেন, ঘন কুয়াশায় বেআইনি অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে। আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়েছে BSF। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার, দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার এবং গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ার। মুর্শিদাবাদ পড়ে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের মধ্যে। প্রশাসন সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারত-বাংলাদেশের প্রায় ৯৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, যার অধিকাংশ জায়গাতেই কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, রানিনগর দুই নম্বর ব্লক, ভগবানগোলার বিস্তীর্ণ এলাকায় চারিদিকে ধু ধু করছে মাঠ! চলছে চাষ-আবাদ। এটা হল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বামনাবাদ বর্ডার। অনায়াসেই চলে যাওয়া গেল সীমান্তের একেবারে কাছে! ওপারে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা। স্থানীয় বাসিন্দা বাবর শেখ বলেন, "উল্টোদিকেই বাংলাদেশ। গত কয়েকদিন ধরে কড়াকড়ি হয়েছে। বাংলাদেশের লোক ঢোকার চেষ্টা করছে। এখানে কাঁটাতার নেই।"
গোয়েন্দা সূত্রে চাঞ্চল্য়কর দাবি, অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে অশান্তি শুরুর পর থেকে এই অংশ দিয়ে বিপুল সংখ্য়ক বাংলাদেশি পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করেছে। যার মধ্য়ে বহু জঙ্গির থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা দাতাকর্ণ মণ্ডল বলেন, "বাংলাদেশের দিক থেকে আসতে চাইলে আসতেই পারে। পলো না করলে চলে আসতেই পারে।"
লালগোলার খানদুয়ায় দুই দেশকে ভাগ করেছে পদ্মার এই শাখানদী। স্বাভাবিকভাবেই কাঁটাতার নেই এখানেও। তবে কড়া নজরদারি জারি রেখেছে BSF। গ্রামে গ্রামে গিয়ে চলছে জনসংযোগ। কেউ ঢুকে পড়েছে জানতে পারলে জানাতে বলা হয়েছে বিএসএফ-কে।
বাইট - নাম বলানো, বাসিন্দা, লালগোলা
কিন্তু, অনুপ্রবেশের সমস্য়া তো আজকের নয়। তাহলে সীমান্তে কাঁটাতার নেই কেন? বিজেপি-র রাহুল সিনহার দাবি, ৯০ শতাংশ জায়গায় কাঁটাতার রয়েছে। ১০ শতাংশ জায়গায় রাজ্য জমি দেয়নি বলে হয়নি। জমির সমস্যা মিটলে হয়ে যেত। যদিও এ নিয়ে কেন্দ্রের অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দিকে আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। রাজ্যের ঘাড়ে দোষ ঠেলে কেন্দ্র আসলে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে বলে দাবি তাঁর। কিন্তু, কেন্দ্র-রাজ্য় এই দায় ঠেলাঠেলি আর কতদিন? রাজ্য় যখন ঝুঁকির মুখে, জঙ্গি অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটছে, তখনও দায় ঠেলাঠেলির জেরে সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে থাকবে কেন? এখন যে জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, তারা কিছু একটা ঘটিয়ে ফেললে, তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হলে, সেই দায় নেবে কে? সেই প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে।