প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। ইডি সূত্রে দাবি, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে মেলা এক নথি থেকে এমনই তথ্য মিলেছে। খোঁজ মিলছে ভুয়ো ডিরেক্টরেরও! কীভাবে তৈরি হয়েছিল অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড নামে এই কোম্পানি?
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডেও চিটফাণ্ডকাণ্ডের ছায়া
ফ্ল্যাটে টাকা, ব্যাঙ্কে টাকা, কলকাতায় ফ্ল্যাট, শান্তিনিকেতনে বাড়ি, শহর থেকে শহরতলি সম্পত্তির ছড়াছড়ি! উঠে আসছে নানা ভুয়ো কোম্পানির হদিশও । ইডি সূত্রে দাবি, এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডেও দেখা যাচ্ছে চিটফাণ্ডকাণ্ডের ছায়া!
অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড
উঠে আসছে একের পর এক ভুয়ো কোম্পানি। ভুয়ো কোম্পানির মতোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই কোম্পানিগুলির ভুয়ো ডিরেক্টররা। ইডির অফিসাররা মনে করছেন, এই সব ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমেই প্রচুর টাকার আদান প্রদান হয়েছে।
ইডি সূত্রে দাবি, ভুয়ো এই কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম হল, ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’।
টাউন হাইটসের ফ্ল্যাট থেকে ২৮ কোটি টাকা উদ্ধার হয়, সেদিনই ফ্ল্যাটে পাওয়া একটি নথি থেকে এই কোম্পানির হদিশ মেলে। এরপর কোম্পানি বিষয়কমন্ত্রকের তথ্য খতিয়ে দেখা যায়, এই কোম্পানির বর্তমান ঠিকানা অর্পিতার ক্লাব টাউনের 8A ফ্ল্যাট।
অজান্তেই ডিরেক্টর !
ইডি সূত্রে দাবি, ২০১২ সালে এই ভুয়ো ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’ কোম্পানি তৈরি হয়। তার প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন হাওড়ার দুই বাসিন্দা সুমিত কুমার সিং এবং সুভাষ পাল। কোম্পানি তৈরির সময় ঠিকানা ছিল 9/1 মোহনলাল বাহালওয়ালা রোড, বালি, হাওড়া। বালির 10/10 বাহালওয়ালা রোডে গিয়ে জানা গেল, সুমিত কুমার সিং বর্তমানে বেঙ্গালুরু থাকেন। কিন্তু তাঁর শ্যালক ক্যামেরা দেখেই, আমাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন।
পাশেই থাকেন কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে নাম থাকা সুভাষ পাল। কী উদ্দেশ্যে তিনি এই কোম্পানি খুলেছিলেন? জিজ্ঞাসা করতেই উঠে এল বিস্ফোরক দাবি! তিনি বলেন, ' দেখুন আমরা অত্যন্ত গরিব। ২০১২ সালে এই বিপিন আমার কাছে এসেছিল। বলল মাসে মাসে টাকা দেব। বলল আর আমরা করে দিলাম। ... ৩ দিন আগে বলেছে, কেউ আসলে সুরানাজির নাম বলে দেবে।
ইডি সূত্রে দাবি, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পদত্যাগ করেন ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর দু’জন ডিরেক্টরই। কোম্পানির নতুন ডিরেক্টর হন তেঘরিয়ার বাসিন্দা মৃন্ময় মালাকার এবং বিহারের বাসিন্দা রনেশ কুমার সিং।সেই মৃন্ময় মালাকারের তেঘরিয়ার বাড়িতেও গিয়েছিল এবিপি আনন্দ। তাঁকে দেখানো হয়, ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ডিরেক্টর পদে তাঁর নাম থাকার নথি! কোম্পানির প্রথম ডিরেক্টর সুভাষ পালের মতোই আকাশ থেকে পড়েন তিনিও। ' আমি তো আজ পর্যন্ত জানি না। সইও আমার। অর্পিতাকে চিনিও না।'
চমকের আরও বাকি। ইডি অফিসারদের দাবি, ২০১৯ সালে ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ঠিকানার পরিবর্তন হয়। হাওড়ার ঠিকানা বদলে গিয়ে অর্পিতার বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন হাইটসের ফ্ল্যাটের ঠিকানা হয়ে যায়। নতুন ইমেল আডি হয় arpmymail@gmail.com । এই ইমেল অ্যাড্রেস অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। ইডি সূত্রে দাবি, এই ধরনের ভুয়ো কোম্পানি বা শেল কোম্পানি তৈরি করা হত। তারপর মৃন্ময় মালাকার বা সুভাষ পালেদের মতো লোকেদের, অজান্তেই বা কখনও অল্প পয়সার বিনিময়ে ডিরেক্টর বানানো হয়। তারপর সেই কোম্পানির মাধ্যমে পাচার হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকা।
গ্রাফিক্স আউট
এখন এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে কত টাকা কোথায় পাচার হয়েছে, সেদিকেই নজর ইডির।