কলকাতা: রাজ্য জুড়ে বাড়ছে অ্যাডিনো আতঙ্ক। বি সি রায় হাসপাতালে ১৩ ঘণ্টায় আরও সাত শিশুর মৃত্যু। এই নিয়ে দুই মাসে রাজ্যে ৯৫ জন শিশুর মৃত্যু হল। যে সব হাসপাতালে শিশুদের বহির্বিভাগ নেই, সেখানে অ্যাাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিক খোলার জন্য পাঠানো হচ্ছে বাড়তি চিকিৎসক। জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সচিব।


রাজ্য জুড়ে মারণ থাবা বসিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস। বি সি রায় হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভয়াবহ অ্যাডিনো-আতঙ্কের মধ্যে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত মাত্র ১৩ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে সাত  শিশুর।


এই পরিস্থিতিতে শনিবার হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারান স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন তিনি। শিশু মৃত্যু নিয়ে খবর করাতেও আপত্তি জানান স্বাস্থ্য অধিকর্তা। পরে তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। জানান, পরিস্থিতি কখনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল না। সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


সব মিলিয়ে গত  দুই মাসে মৃত শিশুর সংখ্য়া বে়ড়ে দাঁড়াল ৯৫। সূত্রের খবর, তার মধ্যে বি সি রায় শিশু হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন শিশুর। আরজি কর এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে ৪১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর।  


ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এ মৃত্যু হয়েছে পাঁচ  জনের। পিয়ারলেস হাসপাতাল, চিত্তরঞ্জন শিশু সদনেও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে খবর। বাঁকুড়া জেলা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে, পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও মৃত্যু হয়েছে একাধিক শিশুর। 


এই বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব, নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, পরিস্থিতিত ওপর নজর রাখা হয়েছে। যে সব হাসপাতালে শিশুদের বহির্বিভাগ নেই, সেখানে অ্যাাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিক খোলার জন্য বাড়তি চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে। প্রয়োজনে ছুটির দিনেও তাঁরা এমার্জেন্সিতে থাকবেন।


এক দিকে, বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। অন্য দিকে, শিশুমৃত্যুর পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে অনেক দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। তা নিয়েও বাড়ছে ক্ষোভ। 


সেই মৃত্যু মিছিল, সেই হাহাকার অ্যাডিনোর আতঙ্ক করোনার সেই ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। জেলা থেকে কাতারে কাতারে শিশু রোগী ভিড় করছে কলকাতার হাসপাতালে। আউটডোরের সামনে উপচে পড়া ভিড়.. কেউ সন্তানের জন্য একটা আইসিইউ বেড জোগাড় করতে হন্যে হয়ে ছুটছে। এই পরিস্থিতিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি, নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর জানায়, সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতাল, জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গুলোতে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিক। কিন্তু রবিবার ছুটির দিন একেবারে উল্টো ছবি ধরা পড়ল শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিশু হাসপাতাল বিসি রায়ে। 


অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ক্লিনিকে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের চিকিৎসা হয়। রবিবার বিসি রায় হাসপাতালে জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ১৩ ঘণ্টায় ৭ শিশুর প্রাণ গিয়েছে। সেদিনও, সকাল থেকে তালা ঝুলতে দেখা যায় এআরআই ক্লিনিকে। যদিও স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, বহু হাসপাতালে জরুরি বিভাগে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। তাই এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। বিসি রায় হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা এমার্জেন্সি রয়েছে। তাই শিশুদের পরিষেবা পেতে সমস্যা হবে না। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ব্য়র্থতার অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি-সিপিএম। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যকে নিশানা বিরোধীদের। পাল্টা জবাব তৃণমূলের রাজনীতি চলছে। শিশুদের মৃত্যু মিছিলও বাড়ছে।