উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: তৃণমূলে থাকাকালীন, সিপিএম বিধায়ককে কেনার দাবি করে, রাজ্য় রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সেই সময়ে বাম ও কংগ্রেস ছেড়ে অন্য় যে বিধায়করা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাও কি টাকার লোভেই শিবির বদলেছিলেন? দলবদলকারী বিধায়করা অবশ্য় এখন একথা মানতে নারাজ।


বিধায়কদের দলবদল এরাজ্য়ে নতুন নয়। কিন্তু এই প্রথম, কারও মুখে খোলাখুলি শোনা গেল, টাকার দিয়ে বিধায়ক কেনার দাবি। সেই সঙ্গে মুখ্য়মন্ত্রীর কথায় বিধায়ক কিনেছিলেন বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ! আর সেই ব্য়ক্তির নাম শুভেন্দু অধিকারী, যিনি নিজেও দল বদলে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে গেছেন।

এই অভিযোগ নিয়ে পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও। তবে, এই বাগযুদ্ধের মধ্য়ে প্রশ্ন উঠছে, তাহল, সেই সময়ে কানাইয়ের পাশাপাশি আরও যে বিরোধী বিধায়করা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন, তাঁদেরও কি টাকার লোভ দেখানো হয়েছিল? টাকার জন্য়ই কি বিরোধী দল ছেড়ে শাসক শিবিরে গিয়েছিলেন তাঁরা, উঠছে প্রশ্ন।

কানাই মণ্ডলের মতো সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন জলঙ্গির তৎকালীন বাম বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক। তিনিও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দুর হাত ধরেই।মযদিও টাকার প্রস্তাবের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। বাম শিবিরের পাশাপাশি সেই সময় মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসেও বড়সড় ভাঙন ধরিয়েছিল তৃণমূল। দল বদলেছিলেন আখরুজ্জামান, আশিস মারজিত, আবু তাহের খানের মতো জন প্রতিনিধিরা। তবে টাকার বিনিময়ে দলবদলের কোনও প্রস্তাব বা জল্পনার কথা মানতে নারাজ প্রত্য়েকেই।

বিধায়ক পদ না ছাড়লেও, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন অপূর্ব সরকার এবং শাওনী সিংহ রায়ও। শুভেন্দু মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক থাকাকালীন এই জেলায় স্রেফ কংগ্রেস ভাঙিয়ে একের পর এক ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১৫ সালের পুরভোটে মুর্শিদাবাদ জেলার ৭টি পুরসভার মধ্য়ে পাঁচটিতে জেতে কংগ্রেস। দু'টিতে বামেরা। এর মধ্য়ে বেলডাঙা, ধূলিয়ান, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর পুরসভায় তৃণমূলের একজনও কাউন্সিলর ছিল না। কিন্তু স্রেফ বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে এই সাতটি পুরসভার প্রত্য়েকটি দখল করে নেয় তৃণমূল।

শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ৬৮টি আসনের মধ্য়ে তৃণমূল জিতেছিল মাত্র একটিতে।
কিন্তু, কংগ্রেস ও বাম শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে, সেই জেলা পরিষদও দখল করে তৃণমূল। একই ভাবে ভোটে না জিতেও মালদা, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শুভেন্দুর এখনকার দাবি ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, এই সবই কি হয়েছিল টাকার বিনিময়ে! যদিও ইদানীং কালে রাজনীতির এমনই দস্তুর।