গৌতম মণ্ডল, সৌভিক মজুমদার ও দীপক ঘোষ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কোথাও উপভোক্তার নামই নেই। কোথাও আবার সুবিধাপ্রাপকের নামের জায়গায় লেখা, 'গোয়ালঘর'! অথচ এই সব অ্য়াকাউন্টেই জমা পড়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার লক্ষ লক্ষ টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে এমন সাতাশ জনকে টাকা ফেরতের নোটিস পাঠিয়েছে প্রশাসন। তালিকায় রয়েছে একাধিক স্থানীয় তৃণমূল নেতার আত্মীয়ের নাম। আর তা নিয়ে আক্রমণ শানাতে ছাড়েনি বিরোধীরা।


লিস্টে দেখা যাচ্ছে, name of benificiary বা উপভোক্তার নামের তালিকায় লেখা রয়েছে গোয়াল ঘর, কোথাও আবার লেখা রাধাবল। এর কী অর্থ, প্রশাসনও সদুত্তর দিতে পারেনি। কোথাও আবার উপভোক্তার নামের জায়গায় লেখা, নো নেম।  অথচ নামহীনের অ্য়াকাউন্টেই জমা পড়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার লক্ষাধিক টাকা! দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকে আবাস যোজনার প্রকল্পে মারাত্মক বেনিয়ম!!


ইতিমধ্য়ে, ৬ নভেম্বর নোটিস দিয়ে, ২৭ জনকে ১ সপ্তাহের মধ্য়ে টাকা ফেরতের নোটিস দিয়েছেন বিডিও। স্থানীয় সূত্রে দাবি, যাঁদের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার নোটিস গেছে, তাঁরা অধিকাংশই তৃণমূল ঘেঁষা। 


যেমন, তৃণমূল পরিচালিত নগেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ও বর্তমান সদস্য আরজিনা গাজির শ্বশুর খালেক গাজি। বাড়ি-ঘর থাকা সত্ত্বেও, তাঁর অ্য়াকাউন্টে ঢুকেছিল লক্ষাধিক টাকা! কোথাও আবার আবেদন না করা সত্ত্বেও, স্থানীয় তৃণমূল নেতার স্ত্রীর অ্য়াকাউন্টে ঢুকেছে আবাস যোজনার টাকা! 


মথুরাপুর নগেন্দ্রপুর উত্তম দলুই বলছেন, 'ছেলে বাইরে কাজ করে, টাকা সেখান থেকে পাঠায়, সেই সূত্রে আমরা খরচ করেছি। এখন জানতে পারছি যে এটা সরকারি টাকা। আমাদের নামে কোনও আবাস যোজনা ছিল না'।


কিন্তু পুরো বিষয়টা প্রকাশ্য়ে এল কীভাবে? তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রাক্তন এক আবাস বন্ধুর অভিযোগ, ২০২০-২১ সালে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও পঞ্চায়েতের কর্মীদের একাংশ আবাস যোজনার তালিকায় দুর্নীতির চেষ্টা করে। তাতে বাধা দেওয়ায়, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন প্রাক্তন আবাস বন্ধু। তার প্রেক্ষিতে জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্তে নামে ব্লক প্রশাসন। সেই তদন্তেই উঠে আসে এই ২৭ জনের নাম। যাদের অ্য়াকাউন্টে কিনা আবাস যোজনার ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে ঢুকেছে। 


মথুরাপুর অভিযোগকারী দীপু বর, সেই সময়ে তৃণমূলের প্রধান, পঞ্চায়েত এবং যিনি পঞ্চায়েত অফিস পরিচালনা করতেন,  তিনি বলছেন, আমাকে দিয়ে এরকম দুর্নীতি করাতে পারেনি, ওরা আমাকে সরিয়ে দিল এবং ওদের মনমতো লোক, দলীয় লোক দিয়ে এই দুর্নীতিটা করেছে, তৃণমূলের দালালরা এই টাকাগুলি আত্মসাৎ করছে, সেটা হতে দিতে পারি না, সেইজন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।


১টা ব্লকে এত অনিয়ম! তাহলে গোটা রাজ্য়ে কী অবস্থা? প্রশ্ন বিরোধীদের। সরকারি এই প্রকল্পে বরাদ্দের যাঁরা আসল হকদার, তাঁরা সবাই কবে টাকা পাবেন?