মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনির্বাণ বাগচী, মুর্শিদাবাদ: কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর, মালদার পরে এবার মুর্শিদাবাদে অভিষেক। মুর্শিদাবাদে ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় অধীর চৌধুরী। 'বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে একমাত্র তৃণমূল। বাংলার বকেয়া নিয়ে একদিনও রাস্তায় নামেননি অধীর চৌধুরী। বাংলার পাওনা মেটানোর দাবি নিয়ে একদিনও সরব হননি দিল্লিতে। কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে কংগ্রেসের কেউ কোনও কথা বলেনি। অধীর-সেলিমরা কোনওদিন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের বিরুদ্ধে কথা বলেন না'। 


এদিন বিজেপির প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, 'সাগরদিঘির ভোটের পর নতুন করে অক্সিজেন পেয়েছে বিজেপি। আগেই বলেছিলাম, সাগরদিঘিতে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেই বিজেপিকে ভোট'। ফের কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ অভিষেকের। 'সিপিএম কংগ্রেস শুধু তৃণমূলকে নিশানা করে, বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও কথা বলে না। যতদিন আমরা আছি, ততদিন এক ছটাক জমিও বিজেপিকে ছাড়ব না'। 


এবার মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়েই অধীর চৌধুরীকে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছেন, অধীর চৌধুরী কি একবারও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন? বৈঠক করেছেন? প্রশ্ন তুললেন অভিষেক। কেন্দ্র কোথায় বঞ্চনা করেছে, সেটা তৃণমূল নেত্রী এবং অভিষেকই জানেন। পাল্টা জবাব দিয়েছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ।


এদিন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়েঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১০০ দিনের টাকা বন্ধ। কংগ্রেস একটা চিঠি পর্যন্ত লেখেনি... অধীর চৌধুরী বা কংগ্রেসের কোনও নেতা একটা চিঠি নরেন্দ্র মোদিকে লেখেনি, একটা বৈঠক করেনি... একদিনও রাস্তায় নামতে দেখেছেন?


পাল্টা অধীর চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার পরিমাণ কী, কোথায় বঞ্চনা, কেন বঞ্চনা, সেটা দিদি জানেন আর দিদির খোকাবাবু জানেন। আর কি বাংলার মানুষ জানেন কেউ? মুর্শিদাবাদের মানুষকে যেন বোকা বানানোর চেষ্টা না করেন।


মুর্শিদাবাদের জনসংযোগ যাত্রায় এবার অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বনাম অধীর চৌধুরী। একটা সময়ে মুর্শিদাবাদ মানেই ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। অধীর চৌধুরীর গড়। তারপর, গঙ্গার পাড়ের মতো, কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে, সেখানে ঘাসফুল ফুটিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, বহরমপুর আজও তাদের কাছে অধরা। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলার ৩টি কেন্দ্রের মধ্যে, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর দখল করলেও, অধীর চৌধুরীর বহরমপুরে দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। 


১৯৯৯ সাল থেকে টানা সেই কেন্দ্র ধরে রেখেছেন অধীর চৌধুরীই। এই প্রেক্ষাপটে লোকসভা ভোটের আগে, মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে বারবার অধীর চৌধুরীকে নিশানা করছে তৃণমূল। শুক্রবার নাম না করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, মুর্শিদাবাদে দীর্ঘদিন ধরে অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় কথা বলেন। কেউ আজ পর্যন্ত কোনও কাজ করেননি। কাজগুলো আমাদেরই করতে হবে। তাতে টাকা পয়সার সমস্যা আছে কিছু ঠিকই। ইতিহাসকে ভুলে গেলে চলবে না।


শনিবার জনসংযোগ যাত্রার ১২ দিনে, মুর্শিদাবাদের রানিনগরে দাঁড়িয়ে অধীর চৌধুরীকে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উন্নয়ন নিয়ে অভিষেককে পাল্টা জবাব দিয়েছেন অধীরও।


এদিন তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতী সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ৫ মাসে অধীর একটাও মিটিং করেছে কেন্দ্রের সঙ্গে? এত লোকের টাকা কেন আটকে রয়েছে, ফিরিয়ে দিতে পারে, কেউ যদি দেখাতে পারে, অধীর চৌধুরী একদিনও কেন্দ্রকে বলেছে, সেদিনই নব জোয়ার থামিয়ে দেব।


বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর কথায়, প্রত্যেকটা জেলায় যেমন DISHA কমিটি হয়, সেরকম মুর্শিদাবাদের কমিটির চেয়ারম্যান আমি। গত ১২ বছর ধরে মিটিং ডাকা হয়নি। জেলাশাসকরা বলেন ডাকছি। এক জেলাশাসক ডেকেছিলেন, পরের দিন তাঁকে ট্রান্সফার করে দিয়েছে।


আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলছেই। কিন্তু, আগামীবছর লোকসভা ভোটে কার পক্ষে রায় দেবে মুর্শিদাবাদ? কী হবে অধীর চৌধুরীর বহরমপুরে? সেটাই দেখার।