তুহিন অধিকারী ও শিবাশিস মৌলিক, বাঁকুড়া: প্রবল বৃষ্টি। তার মধ্য়েই দুর্ঘটনা। বৃষ্টির মধ্যে মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে মৃত্যু হল ৩ শিশুর। বাঁকুড়ার (Bankura) বিষ্ণুপুরের এই ঘটনায় শিশুমৃত্য়ুর শোক পেরিয়ে সামনে এসে গেল আবাস যোজনার নিয়ে তরজা। তৃণমূলের (TMC) অভিযোগ, মোদি সরকার, আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় সবাই পাকা বাড়ি পাননি। তার ফল ভুগতে হয়েছে পরিবারটিকে। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের দুর্নীতির ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।


১০০ দিনের কাজের পাশাপাশি, আবাস যোজনার বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে শনিবার দিল্লি রওনা দিল তৃণমূল। আর সেই সকালেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ঘটে গেল মর্মান্তিক এক ঘটনা। যা নিয়ে ফের আবাস-সংঘাতে জড়াল তৃণমূল এবং বিজেপি।
 
শনিবার টানা বৃষ্টির মধ্যে, বাঁকুড়ায় মাটির বাড়ির দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয় ৩ শিশুর। এরপরই সন্তান হারানোর শোকে আকুল, এই মানুষগুলোর গলায় ঝরে পড়ে আবাস প্রকল্পে, একটা পাকা বাড়ি না পাওয়ার আক্ষেপ। মৃত শিশুর পরিবারের সদস্য দীনবন্ধু সর্দারের দাবি, তাঁরা আবাস যোজনার বাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। তালিকায় নাম থাকলেও বাড়ি হয়নি, তার জেরেই এমন দুর্ঘটনা বলে আক্ষেপ তাঁর। 


যে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ তুলে তৃণমূল দিল্লি যাচ্ছে, সেই বিজেপিরই (BJP) বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, এদিন শিশু মৃত্য়ুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান। তারপর সাংসদ ও তাঁর আপ্ত সহায়ক যখন গ্রাম থেকে বেরিয়ে আসছেন, তখন তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়। 


বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা আইফ আলি খান, 'ও তো রাজনীতি করতে এসেছে। মুখ দেখাতে এসেছে। দিয়ে ভয়ে পালিয়ে গেছে। ৫ বছরে একবারও আমাদের বাকাদহ অঞ্চলে দেখা পাইনি। পাকা বাড়ি কেন পাচ্ছেন না জিজ্ঞাসা করেছিলেন - তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে কী বলবে। কোনও উত্তর দিতে পারেনি সে।'


গ্রামবাসীদের একাংশ যখন স্থানীয় বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তখন সৌমিত্র খাঁ  আবাস যোজনা প্রকল্পের বরাদ্দ ঘিরে জটিলতার জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন রাজ্যের শাসকদলকেই। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, 'আজকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দিল্লিতে বাসলীলা করতে যাচ্ছে, রঙ্গলীলা করতে যাচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষরা বাড়ি পাচ্ছেন না। বাংলার আবাস যোজনা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর নাম চেঞ্জ করে দিয়েছিলেন। বাংলার আবাস যোজনা তো তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি তো তাঁরা চুরি করে খেয়ে নিয়েছেন।'


তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, 'বকেয়া আবাসের টাকাটা দিলে এই ৩টে বাচ্চা মারা যেত না। সৌমিত্র খাঁ বাতেলা দিচ্ছে। বলেন, আমি ফোন করলে আবাস যোজনার টাকা পেয়ে যাবে। এই খুনের দায় নিন তাহলে। সুকান্ত-শুভেন্দু-সৌমিত্র হাতে রক্ত লেগে আছে।'


১০০ দিনের কাজের পাশাপাশি আবাস যোজনায় বরাদ্দ নিয়েও তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি চলছে। এই ইস্যুতেই আন্দোলনের আঁচ পৌঁছেছে দিল্লি পর্যন্ত। কিন্তু, দড়ি টানাটানির মাঝে, প্রশ্ন একটাই, তিন-তিনজন কোলের শিশু হারানো পরিবারকে কী বলে সান্তনা দেবেন রাজনীতির কারবারিরা?   

আরও পড়ুন: জাতীয় সড়কের ধারে উল্টে গেল পুরী-ফেরত পর্যটকদের বাস!জখম একাধিক