প্রসূন চক্রবর্তী , বিশ্বজিৎ দাস, বাঁকুড়া : পায়ের নিচে ছিল এবড়ো খেবড়ো রাস্তা। সামনে অনেকটা পথ। সঙ্গী ছিল স্ট্রাগল আর চোখে ছিল আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। 


 'চুড়ি, ফিতে, খেলনা নেবে গো' হাঁক দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করা ছেলেটা তাই সব বাধা পেরিয়ে  সর্বভারতীয় স্তরের একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। অবাক হচ্ছেন তো ?বাস্তব জীবনের ফেরিওয়ালা কীভাবে তাঁর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হলো? গ্রামের পথে ফেরি করতে করতে  কীভাবে এক ছেলে  নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলল ? সে কথা ছোটন নিজেও ভাবতে পারে না বটে ! 


Anubrata Mandal: প্রভাবশালী তত্ত্বে ফিরহাদের ‘বাঘ’ উপমার উল্লেখ আদালতে, ফের জামিনের আর্জি খারিজ অনুব্রতর


 


স্বপ্নের ফেরিওয়ালা 
বাঁকুড়া ( Bankura )  জেলার শালতোড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম  পাবড়া, সেখানেই বাস ছোটন কর্মকারের। বাবা কানাই কর্মকারও একজন ফেরিওয়ালা। বাবা মা ছেলের সংসার।  হাল ধরতে বাবার মতোই ফেরি করতেন ছোটন। সর্বভারতীয় স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সে সাফল্য পায় এবং বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তাঁর সামনে খুলে যায় সেই স্বপ্নের দরজা - আইআইটি খড়্গপুর (Indian Institute of Technology Kharagpur)।


যে পিঠ আগে বইত ফেরি করার জিনিসপত্র, তা আজ বই-খাতার ভার বইছে আনন্দ করে।  তবুও সাবলীল ভাবটা  প্রথমে আসেনি। জানা গেল, প্রথমে ক্যাম্পাসে নাকি তিনি ইতস্ততই করছিলেন। খড়গপুর আইআইটির কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ করে , বৈধ নথিপত্র দেখে তাঁকে এগিয়ে যেতে দেন। 


ছাপোষা পরিবারের ছেলে। গ্রামেরই সরকারি  স্কুলে তাঁর পড়াশুনো। যে ছেলে সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে চুড়ি মালা ফেরি করে বেড়াত, সেই ছেলে কিনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেক এ ভর্তি, তাও আই আই টির মতো সর্বভারতীয় একটা প্রতিষ্ঠানে!  এ যেন গল্প হলেও সত্যি- ভাবতেই পারছে না তাঁর গ্রাম। ছোটনের বাবা কানাই বাবু আইআইটি কী জিনিস তা না বুঝলেও ছেলের সাফল্যে সে বেজায় খুশি। 


কোন পথে সাফল্য 
ছোটন জানান, শিক্ষক, বন্ধু বান্ধব এবং একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তা না পেলে তার পক্ষে আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা বা আইআইটিতে ভর্তি হওয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তাঁর পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি নেই। কিন্তু স্বপ্ন ছিল খড়্গপুর আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার। তাই রাজ্য জয়েন্টে কৃতকার্য হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও তিনি অপেক্ষা করেছেন আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলের জন্য। স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপের সাফল্যে তাই ছোটন রীতিমত আনন্দিত।