পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : সম্প্রতি বাঁকুড়ার নতুন চটি এলাকায় খুন হন বাবা ও ছেলে। সেই ঘটনায় এবার অভিযুক্ত পিন্টু রুইদাসের বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শনিবার সকাল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে।
যে বাড়ি তৈরি করা নিয়ে বিবাদ, জোড়া খুন, গ্রেফতারি, এবার আদালতের নির্দেশে ভাঙা হচ্ছে সেই বাড়ি। বাঁকুড়া শহরের নতুন চটি এলাকায় তৈরি হয়েছিল এই দোতলা বাড়ি। শনিবার থেকে সেই বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করল বাঁকুড়া পুরসভা।
অভিযোগ, দিনকয়েক আগে সম্পত্তিগত বিবাদে প্রতিবেশী পরিবারের হাতে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মথুরামোহন দত্ত ও তাঁর ছেলে শ্রীধর দত্ত। ঘটনায় আহত হন মথুরামোহন দত্তর স্ত্রী মল্লিকা দত্ত। বাঁকুড়ার নতুনচটি এলাকার ঘটনা। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রতিবেশী পিন্টু রুইদাস, তাঁর স্ত্রী নমিতা রুইদাস ও তাঁদের দুই ছেলে মহেশ্বর ও বিশ্বেশ্বরকে গ্রেফতার করে।
অভিযোগ ওঠে, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মথুরামোহন দত্তর জমির একাংশ দখল করে বাড়ি করেছেন প্রতিবেশী পিনটু রুইদাস। এই নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মথুরামোহন। গত ১৬ অক্টোবর আদালত বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। অভিযোগ, মামলায় হেরে গত ৩ ডিসেম্বর, মথুরামোহনের বাড়িতে সপরিবারে চড়াও হন পিনটু। বেধড়ক মারধরের জেরে মৃত্যু হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও তাঁর ছেলে শ্রীধরের।
এই ঘটনায় ৫ ডিসেম্বর, দুর্গাপুর থেকে মূল অভিযুক্ত সস্ত্রীক পিন্টু রুইদাস ও তাঁদের দুই ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যে বাড়ি ঘিরে মামলা-মোকদ্দমা, খুনোখুনি, শনিবার সেই বাড়িই ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করল বাঁকুড়া পুরসভা।
ঘটনার জেরে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শহরবাসী। বাঁকুড়া শহরের রাস্তায় মৌন মিছিল করা হয়। বাঁকুড়া শহরের খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুল প্রাঙ্গন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের রাস্তা ঘুরে শেষ হয় ওই স্কুল প্রাঙ্গনেই। বাঁকুড়া শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাটপুরের বাসিন্দা বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুলেরই শিক্ষক প্রদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের সহকর্মী ছিলেন মথুরামোহন । তিনি বলেছিলেন, মথুরাবাবুর সঙ্গে প্রতিবেশীর বিবাদ চলছিল। কিন্তু তাঁর পরিণাম যে এতটাই মর্মান্তিক হবে তা ভাবা যায় না। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি তুলছি।
একই দাবি তোলেন ওই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র কেন্দুয়াডিহি এলাকার বাসিন্দা ঋজু ঘোষ। তিনি বলেন, মৌনতাকে অবলম্বন করে চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজেপির জেলা সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, এই শহরে জমি বিবাদ ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দারা। এই খুনের ঘটনা তারই প্রমাণ। পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এই ঘটনা বলে আমার মনে হয়। এর দায় বাঁকুড়া পুলিশ ও পুরসভার।