পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই মকর সংক্রান্তিতে রাঢ় বঙ্গ-সহ বাঁকুড়া জেলার একটা বড় অংশের মানুষ মেতে উঠবেন টুসু পরবে। তার আগে চলছে টুসু জাগরণের প্রস্তুতি। নিরবচ্ছিন্ন একমাসের টুসু আরাধনা শেষে এখন পৌষ সংক্রান্তিতে জাগরণের মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা। তার আগে জুনবেদিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিয়ালগাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল টুসু পরবের আনন্দে মশগুল আট থেকে আশি সকলেই। 


টুসুর উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ আছে। অঞ্চল ভেদে সেই ব্যাখ্যাও আলাদা। ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে, 'টুসু' শব্দটি অস্ট্রিক ভাষার অন্তর্গত। যার অর্থ ছোট পুতুল বা ছোট মেয়ে। কারো কারো মতে, তস্য নক্ষত্র থেকে 'টুসু' বা 'তুষু' নামকরণ। ভাষাবিদ্ সুকুমার সেনের কথায়, 'টুসু উৎসব তিষ্য নক্ষত্রে অনুষ্ঠিত শস্যোৎসবের প্রবহমান ধারা'। 'টুসু'র সাথে মিল পাওয়া যায় ইউরোপের 'Garden of Adonis' অনুষ্ঠানের। যা শস্যের পুনঃর্জন্মকে ত্বরান্বিত করার কৌশল। আবার কারো কারো মতে, তুষু হল শস্যোৎসব; উর্বরতা উপাসনার সংস্কারজাত। তুষু শব্দটি এসেছে 'তুষ' শব্দটি থেকে। ধানের খোসাকে বলে তুষ। যার রং পাকা সোনার মতো। টুসু পুজো বা উৎসবের সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তাই পুরোহিত লাগে না এই পুজোয়। বাড়ির মেয়েরা নিজেরাই গানের মাধ্যমে আরাধনা করে টুসুর। তাই বলা যেতে পারে ভক্তির পরিবর্তে ভালবাসাই এই উৎসবের প্রধান উপাদান।


তবে এ সবের মধ্যেও আধুনিক নগর সভ্যতার চাপে কমছে টুসুকে নিয়ে উন্মাদনা। মানছেন বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। কিন্তু তার মধ্যেও পৌষ পড়লেই বৃদ্ধা বেলা মালদের মতো কেউ কেউ ফিরে যান অতীতে। তিনি বলেন, 'টুসু আমাদের ঘরের মেয়ে। এখনও নিজের মতো করে টুসু গান করি। আগে এক পাড়ার টুসু অন্য পাড়ায় গিয়ে মালাবদল করা হত। তবে সব থেকে বেশি 'মন খারাপ' লাগত পৌষ সংক্রান্তির দিন টুসু বিসর্জনের সময়।'


লোক সংস্কৃতি গবেষক রবিলোচন ঘোষ বলেন, 'টুসুকে ঘিরে আগের সেই উন্মাদনা এখন আর নেই। তবে এখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। সেই কারণেই শুধুমাত্র টুসুকে কেন্দ্র করেই পরকূল, মাকড়া, ডিহরে শুধুমাত্র টুসুকে কেন্দ্র করেই মেলা বসে।' তবে তাঁরা দৃঢ় সংকল্প নিয়েছেন, কোনও ভাবেই টুসু গানকে হারিয়ে যেতে দেবেন না।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।