ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: গরুপাচার মামলায় জেলে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর অনুপস্থিতিতে সেখানে পুলিশের উদ্দেশে হুশিয়ারি দিতে শোনা গেল বীরভূমে বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহাকে। মমহম্মদবাজারে বিজেপির মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে হেনস্থা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগের ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি সামনে এসেছে। উল্টে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতেই পুলিশ গিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়েই পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গেল ধ্রুবর গলায়। তৃণমূল যদিও হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। (Dhruba Saha)
বীরভূমের মহম্মদবাজারে বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধানকে হেনস্থা ও শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানেক বাড়িতে পুলিশ হাজির হয়েছে বলে খবর। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিলেন ধ্রুব। ওসিকে না পেয়ে, ফোনে ডিউটি অফিসারের সঙ্গেই কথা বলেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "আজকে আপনার বীরভূম পুলিশ, আমি এখনই SP-র কাছে যাচ্ছি। বীরভূম পুলিশ আপনার ওই খরুল অঞ্চলে যা ঘটেছে, সেখানে একরকম করছে, আর এখানে একরকম করছে। কেন হবে এমন?" (Birbhum News)
হুঁশিয়ারির সুরে ধ্রুবকে আরও বলতে শোনা যায়, "আপনারা যদি পরিচিতিটা ভুলে যান, আমিও ভুলে যাব। ভুলে যাব আমি। শুনুন, আপনাকে বলছি, আপনার বীরভূম পুলিশ আমাকে জেল খাটিয়েছে...আমি কিন্তু আবার জেল খাটব।"
যে প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন ধ্রুপ, তার সূত্রপাত ২১ ডিসেম্বর। মহম্মদবাজারে বিজেপি পরিচালিত এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের অভিযোগ, বোর্ডের মিটিং চলার সময়ে তাঁর উপর হামলা চালায় তৃণমূলের কয়েকজন। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, "২১ ডিসেম্বর বোর্ডের মিটিং চলাকালীন সিন্টু পাল মদ্যপান করে আসেন। ওঁর সঙ্গে আরও তিন জন ছিলেন। ওঁরা এসে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করেন। সিন্চু আমাকে পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেন। প্রধান বলে মানেন না, এসব বলতে থাকেন।"
অভিযোককারিণীর দাবি, এ নিয়ে মহম্মদবাজার থানায় অভিযোগ জানালেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তৃণমূল নেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বাড়িতেই হানা দিয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, "আমার স্বামী, ছেলে বাধা দিয়ে গিয়েছিল। তাদের নামেই অভিযোগ দায়ের করেছে। আমি সিন্টু এবং ওই তিন জনের নামে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কথায় গুরুত্বই দিল না পুলিশ। কোনও ব্যবস্থা নিল না। তার পর রাত ১২.৩০টা নাগাদ আমার বাড়িতে পুলিশ আসে, স্বামী এবং ছেলেকে তুলসে নিয়ে যেতে।"
সেই ঘটনাতেই এদিন পুলিশের দ্বারস্থ হন বীরভূমের বিজেপি সভাপতি। তাঁর বক্তব্য, "আপনি বলেন, সরকারি ভাবে ক্ষমতায় আছেন যাঁরা! ওখানে পঞ্চায়েতে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দিলে আপনি স্বতঃপ্রণোদিত কেস করেছেন? আমার প্রধান কান্নাকাটি করছেন। কেন এমন পরিস্থিতি হবে? বলুন আপনি!"
এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বীরভূমে তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "যে আইনভঙ্গ করবে, পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সেই ব্যবস্থাই নিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রধান, তিনি অগণতান্ত্রিক উপায়ে দিনের পর দিন কাজ করে যান। এতে সাধারণ মানুষ তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হবেনই তো! সেই ক্ষিপ্রতারউ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে তৃণমূলের কোনও হাত নেই, যোগাযোগও নেই।" যদিও পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ধ্রুবর। এই ঘটনায় যোগাযোগ করা হলেও, বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, ১৫ জানুয়ারি মহম্মদবাজার থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে বিজেপি।