Kaushiki Amavasya 2022 : কৌশিকী অমাবস্যা, অন্য সব অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা। তন্ত্র ও শাস্ত্র মতে, ভাদ্র মাসের এই তিথিতে অনেক কঠিন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব। কৌশিকী শব্দের আভিধানিক অর্থ, আদ্যাশক্তির রূপ বিশেষ। পুরাণ মতে, কৌশিকী রূপেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন আদ্যাশক্তি।
কথিত আছে, এই তিথিতেই তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেত শিমূল গাছের নিচে বসে সাধনা করেন সাধক বামদেব। ভক্তকে নিরাশ করেননি মা তারা। দেখা দেন বামদেবকে।
'তারা রাত্রি' কী
হিন্দু তন্ত্রমতে, এই তিথিতে কঠোর তপস্যায় আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করতে পারে। এই তিথিতে বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই সাধনাতেই বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয় ৷ এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷
শুম্ভ ও নিশুম্ভ বধের কাহিনি
শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে বলা আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে তাঁদের বর দেন, কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না৷ শুধু কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়? আদ্যা শক্তি মহামায়াও মেনকা রানির গর্ভে জন্ম নিয়েছেন, তাই তিনিও ওঁদের নাশ করতে পারবেন না। তা হলে উপায়?
দেবী কৌশিকীর আবির্ভাব কীভাবে
দেবী সতী দক্ষ যজ্ঞ স্থলে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাই পরবর্তী জন্মে তাঁর গায়ের রং ছিল কালো মেঘের মতো। তাই শিব তাঁকে কালিকা বলে ডাকতেন। একদিন শুম্ভ নিশুম্ভর দ্বারা অতিষ্ঠ হলে ক্লান্ত দেবতারা শিবের সাহায্য চান । তখন শিব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে ডাকেন, “কালিকা তুমি ওদের উদ্ধার করো।” সবার সামনে 'কালী' বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুন্ন হন।
তারপর মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা করেন। তপস্যার পর শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালো পরিত্যাগ করেন দেবী। পূর্ণিমার চাঁদের মতো গাত্র বর্ণ ধারণ করেন তিনি। আর ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। তিনি দেবী কৌশিকী। তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা।
এই তিথিতে তারাপীঠে প্রতিবছর বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়।