মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবির ইসলাম ও সুদীপ্ত আচার্য, বোলপুর : ভয় পেয়েছিলাম। পুলিশ সাহায্য করেনি। বাধ্য হয়েই রাজ্যপালের (Governor) সঙ্গে যোগাযোগ করি। ছাত্র মৃত্যুতে অশান্তির ঘটনা নিয়ে, এমনই মন্তব্য করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Visvabharati University) উপাচার্য। সমস্ত সহযোগিতা করা হয়েছে, পাল্টা দাবি করলেন SDPO। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। অন্যদিকে উপযুক্ত তদন্তের দাবি তুলেছেন মৃতের বাবা।


বিশ্বভারতীর মৃত ছাত্রের বাবা সঞ্জীব দাস বলেন, পুলিশ পুলিশের মতো করুক, CID-ও চাই। 


বিশ্বভারতীর হস্টেলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অসীম দাসের রহস্যমৃত্যুতে, উপযুক্ত তদন্ত চাইছে তার পরিবার। বৃহস্পতিবার হস্টেল থেকে উদ্ধার হয় পড়ুয়ার মৃতদেহ। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে, শুক্রবার রাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। গেটের তালা ভেঙে উপাচার্যর বাংলোয় ঢোকার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। এই ঘটনার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। 


উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, আমি ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমার সঙ্গে মেয়ে থাকে। এসপি ফোন ধরেননি। কোনও সাড়া না পেয়ে, রাজ্যপালকে ফোন করি। উনি আমাদের রেক্টর। রাজ্যপাল ব্যবস্থা না নিলে, জানি না কী হত! পুলিশ এসে কিছু সাহায্য করেনি। আমাদের কয়েকজনকে আটকে রেখেছিল।


রাজ্যপালের বক্তব্য, আমাকে যখন উপাচার্য জানিয়েছিলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি মুখ্যসচিবকে জানাই। তিনি জেলাশাসককে জানান। তাঁরা ব্যবস্থা নেন, তাই বড় কিছু ঘটনা ঘটেনি।


যদিও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বোলপুরের এসডিপিও। বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায় বলেন, মিথ্যা অভিযোগ। পুলিশ প্রথম থেকেই সহযোগিতা করেছে। পুলিশ ছিল ঘটনাস্থলে। বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে।


এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। ছাত্র মৃত্যুতে CBI তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। উপাচার্যের আরও সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই।


রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, একজন ছাত্র কীভাবে মারা গেল, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।


রবিবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় অসীম দাসের। তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও সিপিএমের ছাত্র সংগঠন SFI-এর প্রতিনিধিরা। ক্যাম্পাসে আন্দোলনের পিছনে যাদের বিরুদ্ধে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন উপাচার্য।


পাল্টা জবাব TMCP, SFI’এর। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি-র সভানেত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, উপাচার্য অভিযোগ করেছেন, আমরা নাকি বাইক বাহিনীর তাণ্ডব করেছি। উনি কিছুদিন আগে, ভাইরাল ভিডিওয় বাইকবাহিনীর কথা বলেছিলেন।


বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেতা সোমনাথ সোম বলেন, উপাচার্যের অভিযোগ মিথ্যা, পরিবেশ নষ্ট করেছেন। অতীতেও দেখেছি উপাচার্যের ভূমিকা বিশ্বভারতীর সমতুল্য নয়। উনি চালাতে না পারলে চলে যান। উপাচার্য গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে রাতে তাণ্ডব চালাচ্ছেন।


শান্তিনিকেতন থানা সূত্রে খবর, ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর তদন্তে তাঁর হস্টেলের সহপাঠী ও ওয়ার্ডেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।