কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পর পর CBI, ED-কে তদন্তভার দেওয়া থেকে আদালতের ভিতরে এবং বাইরে তাঁঁর করা নানা মন্তব্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিভিন্ন সময় নানা টিপ্পনির জন্যও বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি লাগাতার রাজনৈতিক মন্তব্য করে এসেছেন বলে উঠেছে অভিযোগ। সেই নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাতেও জড়িয়েছেন। এবার সরাসরি রাজনীতির মঞ্চে অবতীর্ণ হচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। (Justice Abhijit Gangopadhyay)


নিয়োগ দুর্নীতি থেকে সন্দেশখালি, বিভিন্ন মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় নিশানা করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেককে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে বার বার  যে 'ভাইপো' সম্বোধন শোনা গিয়েছে,  সেই ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দবন্ধ শোনা গেছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও।  
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর করোনায় মৃতের স্ত্রীর চাকরির দাবি এবং আর্থিক সাহায্য় সংক্রান্ত একটি মামলায়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, "চোলাই মদ খেয়ে মৃত্য়ু হলে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য় দেওয়া হয়। কোভিডে মৃত্য়ু হলে সেই পরিমাণটা কত? আদৌ কি টাকা দেওয়া হয়? কে একটা ভাইপো আছে, তার বাড়ি চারতলা। কোটি টাকার বাড়ি, কোথা থেকে আসে এত টাকা?" (Abhishek Banerjee)

সম্পত্তি নিয়েও অভিষেককে চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দেন  বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "একজন নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এত সম্পত্তি কোথা থেকে আসে? এটা কী ধরনের রাজ্য চলছে, কী প্রশাসন চলছে, আমরা বুঝতেই পারছি। দেখা যাক কতদিন চলে। আইনের মুখোমুখি হয়ে তারা কত দিন চালাতে পারে!"


আরও পড়ুন: Abhijit Gangopadhyay Exclusive: ‘মৌর্য সাম্রাজ্যের কথা পড়েছি, এখন চৌর্য সাম্রাজ্য দেখছি’, ফের তৃণমূলকে ভর্ৎসনা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের


সম্প্রতি আবার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়ে, ইডি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মার খাওয়ার পরও, বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, "রাজ্যে জঙ্গলরাজ এবং গুন্ডারাজ চলছে। সরকারের সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। এটা প্রাক নির্বাচনী হিংসা হিসেবে যা প্রাথমিক ভাবে শুরু করা হল। এই প্রচেষ্টাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করতে হবে দ্রুত।"


বার বার এভাবে অভিষেককে নিশানা করায়, তৃণমূলের আক্রমণের মুখে পড়েন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষকে বলতে শোনা যায়, "অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের টার্গেটই হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন। ঠান্ডা মাথায় অভিষেকের চরিত্রহননের চেষ্টা করছেন উনি।"


সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, "শুনলাম, আপনাদের লোকেদের মেরেছে। আপনারা কী করছিলেন? ওদের সঙ্গে গুলি-বন্দুক থাকে না? চালাতে পারে না?” ওই আইনজীবী তখন জানান, ইডির অফিসারদের মেরেছে। দু’জন জখম হয়েছেন। বিচারপতি তখন বলেন, “দু’জন অফিসারকে মেরেছে, ২০০ জনকে পাঠান।"


সেই নিয়েও পাল্টা বিচারপতিকে তীব্র আক্রমণ করেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য ছিল, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা আপত্তিকর এবং এক্তিয়ার বহির্ভূত। বিচারপতির চেয়ারকে উনি অপমান করছেন। ওঁর উচিত চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা। না হলে প্রধান বিচারপতির উচিত ওঁকে সতর্ক করা।" সেই আবহেই এবার রাজনীতিতে নাম লেখাতে চলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূলের জন্যই বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, তৃণমূল রাজনীতির ময়দানে আসার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ছিল। সেই চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করেছেন তিনি।