সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : 'কার নির্দেশে অবৈধদের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য আবেদন কমিশনের?' এই প্রশ্ন তুলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। আজ থেকেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)।


'কে করল বেনামি আবেদন?'


রাজ্য সরকারের অবস্থানের সঙ্গে ভিন্ন অবস্থান রেখে তৈরি হওয়া শূন্যপদে প্রথমে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়, তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে পুর্নবহালের আবেদন করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর তীব্র সমালোচনার পরে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে কমিশন। সেই মামলাতেই বিচাপতি গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, কার নির্দেশে করা হয় এহেন আবেদন। যদিও এহেন নির্দেশের কোনও লিখিত প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি কমিশনের আইনজীবী। যার পরই বিচারপতি জানতে চান, ‘কমিশনকে সামনে রেখে কার নির্দেশে শূন্যপদে অবৈধদের নিয়োগ? কে করল বেনামি আবেদন? যার উত্তর না পেয়ে সিবিআইকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের।


নেপথ্যে কার মস্তিষ্ক? সিবিআই তদন্তের নির্দেশ
আবেদনের উৎস কে? খুঁজে বের করতে বলে আজ থেকেই সিবিআইকে তদন্ত শুরুর নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ‘এটা একটা সংগঠিত অপরাধ, যোগ্যরা রাস্তায় ঘুরছে, অযোগ্যদের নিয়োগ’, তদন্ত করে সিবিআইকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ। ‘কমিশনের নামে আবেদন হলেও, এটা কমিশনের করা নয়, কেউ করিয়েছে, শূন্যপদে অবৈধদের চাকরির জন্য আবেদন, এটা বেনামি আবেদন’। নিয়োগ মামলায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানালেন বিচারপতি। কাল সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুল শিক্ষা সচিবকে হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ। ‘শিক্ষামন্ত্রী যদি আদালতে আসতে চান, তাহলে স্বাগত’, কোনও দালাল আসতে চাইলেও, স্বাগত, মন্তব্য বিচারপতির ।


ঠিক কোথায় আলাদা ছিল অবস্থান ?


গত ১৯ মে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছিল। বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগের জন্য ৬৮২১ টি অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছে। গ্রু সি, গ্রুপ ডি থেকে নবম-দ্বাদশ, শারীরশিক্ষা-কর্মশিক্ষা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই যোগ্য কিন্তু বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের জন্যই যে পদ তৈরি বলে দাবি সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে।


কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আদালতের নির্দেশে যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে ওই পদে তাঁদের পুর্নবহালে অগ্রাধিকারের আবেদন করেছিল। যেখানে প্রাথমিকভাবে তিরস্কারের পর বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বক্তব্য, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের অন্য কাজের ব্যবস্থা করা হোক পরিবারের কথা ভেবে। তবে শিক্ষক হিসেবে কখনই নয়। কারণ তাহলে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা।


সরকার অতিরিক্ত শূন্যপদে যোগ্য অথচ বঞ্চিতদের অগ্রাধিকারের কথা বললেও স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি শূন্যপদে আদালতের নির্দেশে চাকরি যাওয়া প্রার্থীদের পুর্নবহালের কথা বলেই বিচারপতির রোষের মুখে পড়ে। 


রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে কি তাহলে নেই কমিশন। আর তাঁদের বক্তব্যের সঙ্গে কমিশনের বক্তব্য ও অবস্থান আলাদা হওয়ার জেরে রাজ্য  পদক্ষেপ করছে বা করার কথা ভাবছে, সেটাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। যার পরই নিজেদের অবস্থান বদলে নিয়ে বাতিল হওয়া প্রার্থীদের অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের আবেদন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল স্কুল সার্ভিস কমিশন।


আরও পড়ুন- 'কেন্দ্রের হারে কবে মিলবে ডিএ'? রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বিধানসভা অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার