সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: সিবিআই-সিটের আধিকারিকদের রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly)। আদালতের নির্দেশ ছাড়া সিবিআই-সিটের কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। দায়ের করা যাবে না কোনও অভিযোগ। কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না নিম্ন আদালত।
বুধবার আদালতে সশরীরে হাজিরা দেন সিটের প্রধান অশ্বিন শেনভি। আদালতে তিনি জানান, কুন্তল ঘোষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। এর পরই সিবিআই-সিটের আধিকারিকদের রক্ষাকবচ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "কেউ যেন সিবিআই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করেন, তার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।"
এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন, "সিবিআই-সিটের কাউকে হেনস্থা করতে পারবে না পুলিশ বা রাজ্যের কোনও সংস্থা। হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া সিটের প্রধান বা কারও বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নয়। কোনও অভিযোগ দায়ের করা যাবে না, পদক্ষেপ করতে পারবে না নিম্ন আদালত।"
সিবিআই-সিটের আধিকারিকদের রক্ষাকবচ দিয়ে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান-
১) সিটের কোন আধিকারিককে কলকাতা পুলিশ বা রাজ্যের কোন সংস্থা হেনস্থা করতে পারবে না।
২) এই আদালতের অনুমতি ছাড়া সিটের প্রধান বা কোন আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ করা যাবে না।
৩) কোথাও কোন অভিযোগ দায়ের করা যাবে না।
৪) নিম্ন আদালতও এক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ করতে পারবে না।
৫) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমি জানতে পেরেছি সিবিআই বিশেষ আদালতের এক বিচারক হেফাজতে থাকা এক অভিযুক্তের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশকে এই মামলায় যুক্ত করেছে। এই অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে ? কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই সিট গঠিত হয়েছে, তার কাজে হস্তক্ষেপ কেন? আমি জানতে পেরেছি এই বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে। কিন্তু কেন তাকে এখনও বদলি করা হয়নি? কার হাত তার মাথায় আছে?"
৬) ৪ অক্টোবরের মধ্যে বদলি করতে হবে অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে।
৭) নতুন করে বিশেষ আদালতে বিচারক নিযুক্ত করতে হবে।
৮) অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে বদলি এবং নতুন বিচারক না আসা পর্যন্ত অর্পণ চট্টোপাধ্যায় কোন মামলার বিচার করতে পারবেন না।
সিবিআই-এর যে সিট কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত, তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি রয়েছে আদালতেরই। তাদের উপর নিম্ন আদালতের বিচারপতি কী করে হস্তক্ষেপ করেন, এদিন প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অন্য মামলায় কেন তাঁদের হেনস্থা করা হবে, কেন কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হবে, প্রশ্ন তোলেন। তাই আদালতের অনুমোদন ছাড়া সিবিআই-সিট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশকে মামলায় যুক্ত করা হয়। ধৃত চার শিক্ষক তদন্তে সহযোগিতা না করলে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাতে ওই চার জনের জেল হেফাজতের নির্দেশও দেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় তাই ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সিটের কাজে হস্তক্ষেপের অধিকার কে দিয়েছে? কেন জেলে পাঠানো হল? কেন এই বিচারক অত্যুৎসাহী হয়ে পড়েছেন?" নতুন কেউ না আসা পর্যন্ত অর্পণ চট্টোপাধ্যায় কোনও বিচার করতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দেন।