সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: দীর্ঘ ৩৬ বছরের আইনি লড়াইয়ে জয়। হাওড়ার এক স্কুলের শিক্ষিকার ২৫ বছরের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাই জয়ের আনন্দে কেঁদে ফেললেন ওই শিক্ষিকা (School Teacher)। তাতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জানান, তাঁর ঘরে আসা কোনও প্রবীণ নাগরিককে খালি হাতে ফেরাতে পারেন না। 


প্রায় সাড়ে তিন দশকের লড়াইয়ের পর জয়


২৫ বছরের বকেয়া বেতনের জন্য ৩৬ বছরের আইনি লড়াই। বৃহস্পতিবার জয় এল ৩ যুগের সেই লড়াইয়ে। শিক্ষিকার আনন্দ ঝরে পড়ল অশ্রু হয়ে। আদালতের রায়ে, অবশেষে কর্মজীবনের বকেয়া বেতন পেতে চলেছেন হাওড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শ্যামলী ঘোষ। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট স্কুলশিক্ষা দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে, ৮ সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে শিক্ষিকার সম্পূর্ণ বেতন। ২০১৩ সাল থেকে এরিয়ারের ওপর দিতে হবে ১০ শতাংশ সুদও। আদালত সূত্রে খবর, বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় শুনানিতে বলেন, তাঁর ঘরে আসা কোনও প্রবীণ নাগরিককে তিনি খালি হাতে ফেরাতে পারেন না। 


যে শিক্ষিকার হাতে সমাজ গঠনের ভার, তাঁকেই ২৫ বছর ধরে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ। ১৯৭৬ সালে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে হাওড়ার শ্যামপুর হাইস্কুলে যোগ দেন শ্যামলী ঘোষ। সমস্যা শুরু হয় ১৯৮০ সাল থেকে। শিক্ষিকার দাবি, কোনও কারণ না দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক জানিয়ে দেন, তাঁকে স্কুলে আসতে হবে না। 


আরও পড়ুন: SSC: এসএসসিতে আরও ৫২৬১টি পদ বাড়ানো হয়েছে, ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর।Bangla News


অভিযোগ, তার পর স্কুল গেলেও লোক দিয়ে বের করে দিতেন প্রধান শিক্ষক।  ১৯৮৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে তাই মামলা দায়ের করেন শ্যামলী ঘোষ। ২০০৫ সালে অবসর নেন তিনি। যদিও স্কুলে তখনও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।  ২০১৩ সালে  বিচারপতি অশোক কুমার দাস অধিকারী শিক্ষিকার যাবতীয় বেতন এবং  পেনশন দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পর পেনশন দেওয়া হলেও বেতন দেয়নি বোর্ড।


সুদ সমেত বেতন মেটানোর নির্দেশ


এর পর বছর ঘুরে গেলেও শিক্ষিকার মামলার সুরহা হয়নি। আর্থিক অনটনের জন্য আইনজীবী ছাড়া নিজেই মামলার শুনানিতে অংশ নেন। ৭৬-এর শিক্ষিকাকে দেখে শেষমেশ তার মামলা দ্রুত শোনার আর্জি গ্রহণ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির বেঞ্চই বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ফের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার ২৫ বছরের বেতন মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে। টানা ৩৬ বছরের লড়াইয়ে অবশেষে আশার আলোয় এজলাসেই কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। তাঁর সিএ পাঠরত ছেলের চোখেও তখন জল।


অবসরপ্রাপ্ত শ্যামলী ঘোষের হয়ে মামলা লড়েন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিলাল মৈত্র। হাইকোর্টের নির্দেশমতো টাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ৮ সপ্তাহের মধ্যে পেলেন কি না, তা দেখার জন্য মামলার নিষ্পত্তি করেননি বিচারপতি।