সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: লাগাতার নিজাম প্যালেজে জিজ্ঞাসা চলছে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal)। বীরভূমের (Birbhum) তৃণমূল (TMC) সভাপতি গরুপাচারে (Cattle Smuggling Case) সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে চার্জশিটেও। এ বার অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের (Sukanya Mandal) নামে থাকা সম্পত্তির উপরও নজর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত-কন্যার নামে এখনও পর্যন্ত বোলপুরেই দশটি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। এর প্রায় প্রতিটিই ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্য়ে কেনা হয়েছে।
নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসা চলছে অনুব্রতকে, তার মধ্যেই কন্যার সম্পত্তির উপর নজর গোয়েন্দাদের
বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত। তাঁর মেয়ে সুকন্যা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। নিচুপট্টির বাড়ি থেকে হাঁটা পথে মিনিট তিনেক দূরত্বেই স্কুল। বছর তিনেক আগে ওই স্কুলেই চাকরি পান সুকন্যা। তাঁর নামে থাকা যাবতীয় সম্পত্তিই এখন সিবিআই-এর নজরে।
সিবিআই সূত্রে খবর, বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় সুকন্যার নামে ১০টি জমির হদিশ মিলেছে। সূত্রের খবর, ANM অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টরও সুকন্যা। মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংস্থাটি তৈরি হয়। সেই সময় সংস্থার শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল ১ কোটি টাকা। সংস্থার দ্বিতীয় ডিরেক্টর বিদ্যুৎবরণ গায়েন।
বোলপুরের কালিকাপুরের হারাধন মণ্ডল রোডে যে ঠিকানায় এই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেটা হল ভোলে বোম রাইস মিলের। CBI সূত্রে দাবি, এই রাইস মিলের মালিক মণ্ডল পরিবার।এ ছাড়াও, সুকন্যার নামে আরও ১০টি জমির চুক্তিপত্র পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। সূত্রের দাবি, এই সম্পত্তিগুলির মধ্যে ৩টি কেনা হয়েছে ভোলে বোম রাইস মিলের নামে।, যেখানে সুকন্যাকে পার্টনার হিসাবে দেখানো হয়েছে।
অনুব্রত মণ্ডলের পাড়া বোলপুরের নিচুপল্লি এলাকায় এই ১০টি জমি কেনা হয়েছে ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে। CBI সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-র ৩০ অক্টোবর একটি জমি কেনা হয়েছিল দ্বিতীয় জমিটি কেনা হয়, এর পরের দিন, অর্থাৎ ২০১৪-র ৩১ অক্টোবর মাসে। এর ঠিক এক মাসের মাথায়, ২০১৪-র ৩ নভেম্বর তৃতীয় জমিটি কেনা হয়। ওই দিনই কেনা হয়েছে চতুর্থ জমিটিও।
এর চার দিন পর, ২০১৪-র ৭ নভেম্বর কেনা হয় পঞ্চম জমি। ষষ্ঠ জমি ২০১৪-র ১৪ই নভেম্বর কেনা হয়। এর পরের জমি কেনা হয় ২০১৪-র ১৭ই নভেম্বর। অষ্টম জমিও কেনা হয়েছে ২০১৪-র ১৭ নভেম্বর। নবম জমি কেনা হয়েছে এর দু’দিন পর। সপ্তম-অষ্টম এবং নবম জমিগুলি কেনা হয়েছে ভোলেবম রাইস মিলের নামে। দশম জমি কেনা হয়েছে, ২০জুলাই ২০১৬ সালে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ১০টি জমির মধ্যে ৭টি জমি হস্তান্তর হয়েছে একই দিনে। ২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর। তাই স্কুলের শিক্ষিকার কী করে এত সম্পত্তি হল, দেখছে সিবিআই।
ANM অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের দ্বিতীয় ডিরেক্টর বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামেও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। স্থানীয়দের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলকে বাবা বলে ডাকেন বিদ্যুৎবরণ। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তিনি ফুলেফেঁপে ওঠেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত, বোলপুর পুরসভার গাড়ির খালাসি হিসেবে কাজ করা বিদ্যুৎবরণ গায়েন, ২০১১ সালে বোলপুর পুরসভায় স্থায়ী চাকরি পান। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এই বাড়িটিরও মালিক বিদ্যুৎবরণ গায়েন। এখন বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
পর পর জমি কেনা হয় বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি
২২ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, "এরকম একাধিক জমি রয়েছে। অনুব্রতকে বাবা বলত বিদ্যুৎবরণ গায়েন। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বলেই এত কিছু হয়েছে। যেখানে তাকাবেন সেখানেই ওর জমি-বাড়ি।" এরকম আরও বাড়ি রয়েছে বলে দাবি করেন অন্য এক বাসিন্দাও।