শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অনন্ত রায়ের (Ananta Roy) সামনেই বাংলার অখণ্ডতার বার্তা দিলেন প্রাক্তন ও বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী (Separate Bengal Claim)। আর এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মেজাজ হারালেন GCPA নেতা (Cooch Behar News)। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির তরজা (TMC/BJP)।
অনন্তর সামনেই অখণ্ড বাংলার বার্তা গৌতম, উদয়নের
বুধবার অনন্ত রায়ের উপস্থিতিতেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম বলেন, "আমাদের বাংলা, আমরা সবাই মিলে অটুট শক্তিতে, আমরা সমস্ত বাংলার মানুষ, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, দিঘা থেকে দার্জিলিং...আমরা বাংলাকে, বাংলার মানচিত্রকে আরও অটুট রেখে, আমরা সমস্ত মানুষকে সাথে নিয়ে...সবাইকে নিয়ে আমরা সামিল হব।"
কী হতে চলেছে উত্তরবঙ্গে? কেন বার বার উঠছে আলাদা রাজ্যের দাবি? কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, কার্যকর হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে কেন দাবি করছেন অনন্ত? ঠিক কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র? গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে জল্পনার পারদ ক্রমশ চড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কোচবিহার পুরসভার রাসমেলার অনুষ্ঠানে, GCPA নেতা, সেই অনন্তকে পাশে বসিয়েই অখণ্ড বাংলার বার্তা দিল তৃণমূল। আর জল্পনা উস্কে তারপরই মেজাজ হারালেন অনন্ত।
৪ নভেম্বর কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়িতে যান GCPA নেতা অনন্ত। দু’জনের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। এর পরই রাজ্যভাগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, "আলাদা রাজ্য সময়ের অপেক্ষা। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।"
সোমবার সেই অনন্তকেই তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পুরসভার, রাসমেলায় আমন্ত্রণ জানাতে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন অনন্ত। আর সেই মঞ্চ থেকে বাংলার ঐক্যের বার্তা দেন তৃণমূলের নেতারা। রাজ্যের বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, "আমরা সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে দেব, আসুন কোচবিহার সব মানুষের নিরাপদ আশ্রয়। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমরা ঐক্যের মধ্যে দিয়ে আগামীদিনে এই বার্তাটাকে আরও ছড়িয়ে দেব।"
কিন্তু পরে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মেজাজ হারান GCPA নেতা। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, মঞ্চে বাংলার অখণ্ডতার বার্তা দেওয়া হল যে, তা নিয়ে কী বলবেন? জবাবে অনন্ত বলেন, "কোথায় বলেছে? কে বলেছে? কে বলেছে অখণ্ড বাংলার কথা! আজ এসব নিয়ে আর কিছু বলব না।"
কোচবিহারের রাজনৈতিক সমীকরণের ক্ষেত্রে GCPA’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অনন্ত রায়ের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত ভোটে অনন্ত রায়পন্থী জিসিপিএ-এর ঢালাও সমর্থন পেয়েই বাজিমাত করেছিল বিজেপি।
এর পর তাঁকেই কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গিয়েছিল অনন্তকে। আবার তৃণমূল পরিচালিত রাসমেলার উদ্বোধনেও আমন্ত্রণ করা হয় অনন্তকে। তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে GCPA নেতাকে কাছে টানার চেষ্টা করছে শাসকদল? তা যদি মানতে নারাজ উদয়ন। তাঁর কথায়, "ভোটের জন্য অনন্ত মহারাজকে দরকার? ভোটে জেতার জন্য কাউকে দরকার হয় না। তৃণমূলের একারই ক্ষমতা আছে জেতার।"
বাংলা ভাগের প্রশ্নে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি
তবে কোচবিহারে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, "তৃণমূল যতই অনন্তকে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করুক, লাভ হবে না। মমতাও চেষ্টা করেছেন। কিছু হবে না। উনি আমাদের সাথেই আছেন। কোথাও যাবেন না।"
বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কোচবিহারে GCPA নেতাকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোর তুঙ্গে।