শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার: পুজোর আগেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল কোচবিহারের রফিকুল হকের। সিকিমের ভয়াবহ বিপর্যয়ে (Sikkim Flash Floods) আপাতত তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে, সিকিমে হানিমুনে গিয়ে আটকে পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার দম্পতি। দুই পরিবারেই চরম উৎকণ্ঠা।


সিকিমে নিখোঁজ কোচবিহারের রাজমিস্ত্রি


প্রকৃতির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সিকিম। (Sikkim Cludburst) কেউ ঘর হারিয়েছেন, তো কেউ খুইয়েছেন প্রিয়জনকে। বিপর্যয়ের সেই আঁচ পৌঁছেছে বাংলাতেও। সিকিমে কাজে কিংবা ঘুরতে গিয়ে আটকে রয়েছেন এরাজ্যের বহু পর্যটক। কোচবিহারের রফিকুল হকও তাঁদের মধ্যে একজন। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের পানিশালার বাসিন্দা রফিকুল সিকিমের লাচুঙে গিয়েছেন রাজমিস্ত্রির কাজ করতে। মঙ্গলবার রাতে শেষবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল পরিবারের। তার পর থেকেই কোনও খোঁজ নেই। সিকিমের ভয়াবহ ছবি দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।


হানিমুনে গিয়ে আটকে বাগদার দম্পতি
 
 রবিবার, পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি।একদিকে যখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে রফিকুলের পরিবারের, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাইন পরিবারে তখন কিছুটা হলেও স্বস্তির হাওয়া। চোখের দেখা দেখতে না পেলেও ওঁরা খোঁজ পেয়েছেন প্রিয়জনের। নিরাপদে আছে জেনে খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। বাগদার রানিহাটির বাসিন্দা নির্মল বাইন ও অঞ্জনা বাইন সদ্য বিবাহিত। সিকিমে হানিমুনে গিয়েছেন। জীবনের এই সেরা মুহূর্তটা যে এভাবে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে, তা ভাবতে পারেননি কেউই।


পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন


মঙ্গলবার রাত থেকে পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চার চারটে নির্ঘুম রাত কাটানোর পর, শনিবার শিলিগুড়ির সেনা ক্যাম্প থেকে পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, নিরাপদে আছেন দম্পতি। বাগদার নির্মল-অঞ্জনা, কোচবিহারের রফিকুল হক দুই পরিবারই চায় নিরাপদে ফিরুক তাঁদের প্রিয়জনরা।


তিস্তার জলে বাংলায় ভেসে এসেছে একের পর এক দেহ


মূলত মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং তার জেরে হড়পা বান, দুইয়ের জেরে বাঁধভাঙা বন্যায় ভেসে গিয়েছে সিকিম।  সিকিমে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯।যে তিস্তা বছরভর পর্যটকদের মন ভোলায়, এবার তার ভয়াল রূপ কেড়ে নিয়েছে জীবন। সিকিমের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। মূলত সিকিমের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফুঁসছে তিস্তা। এর মধ্যেই তিস্তার জলে বাংলায় ভেসে এসেছে একের পর এক দেহ। 


আরও পড়ুন, আগ্রায় ফের দর বাড়ল পেট্রোল ও ডিজেলের, কলকাতায় কতটা সস্তা জ্বালানি ?


৪ অক্টোবর, বুধবার একেবারে ভোররাতে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয় সিকিমে, হিমবাহ হ্রদ ভেঙে বিপুল পরিমাণ জল নামে তিস্তা নদীতে। তার জেরেই হঠাৎ বেড়ে যায় তিস্তার জলস্তর।১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেশ কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে চুংথাং বাঁধও। তিস্তার জল বেড়ে গিয়ে একাধিক ছোট শহর, একাধিক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু কূল ছাপিয়ে বইছে তিস্তা। তার জেরেই প্রবল জলের তোড়ে ধুয়ে মুছে সাফ সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা। কালচিনি-ময়ূরেশ্বরের দুই জওয়ানের মৃত্যু। নিখোঁজ শতাধিক।