শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার : কোচবিহারে (Coochbehar) অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Vote) করাতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের নীচুতলার নেতা ও কর্মীদের বারবার এই বার্তাই দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু, বিরোধীদের দাবি, এসব নেহাতই কথার কথা। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে সুর চড়াচ্ছে তারা।


কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ?


গত মাসে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বার্তা দিয়েছিলেন, প্রত্যেকটা এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মানুষের রায়ে পঞ্চায়েত জিততে হবে। পেশি শক্তি কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। অসৎ উপায়ে মানুষের অধিকার লুণ্ঠন করা যাবে না।


আরও পড়ুন ; স্বাধীনতার ৭৫ বছর, অমৃত মহোৎসবে যোগ রেলেরও, সপ্তাহভর চলবে উৎসব


দিনকয়েক আগে দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহও বলেছিলেন, এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। মানুষ যাকে খুশি ভোট দিতে চান, তিনি নিজের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তাঁর স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করব।


পঞ্চায়েত নির্বাচন পরের বছর। কিন্তু কোচবিহারের তৃণমূলের নেতারা এখন থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছেন নীচুতলার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই কি এই বোধোদয় ?


২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসতে চলেছে, তার আগে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করছেন।


২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এর মধ্যে শুধুমাত্র কোচবিহার জেলাতেই, ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৬৬টি আসনের মধ্যে ৬৭১টিতে বিনা ভোটে জয়ী হয় শাসকদল। যা ৩৪ শতাংশের বেশি। কোচবিহারে মোট ১২টি পঞ্চায়েত সমিতি-র মোট আসন ৩৬৬। যার মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১০৫টি আসনে তৃণমূল জিতেছিল। পরিসংখ্যানে যা প্রায় ২৯ শতাংশ। জেলা পরিষদের ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩২টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়। জয়ী এক নির্দল প্রার্থী পরে যোগ দেন তৃণমূলে।


এর ঠিক ১ বছরের মাথায়, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হাত থেকে কোচবিহার আসন ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার ৯টি আসনের মধ্যে ৭টি কেন্দ্রে জয়ী হয় পদ্ম শিবির।


গত পঞ্চায়েত ভোটে অনিয়মের প্রভাব পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে পড়েছিল বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশ মনে করেন। সেকথা মাথায় রেখেই কি ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের বহু আগে অবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত ভোটের আহ্বান জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা ? 


কোচবিহার জেলা সিপিএমের সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ১৮-তে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি কেন সেটা তৃণমূল বলছে ? মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। এখন এদের বোধোদয় হচ্ছে।


কোচবিহার জেলা বিজেপির সহ সভাপতি প্রণব পাল বলেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তৃণমূল জিততে পারবে না, ভোট লুঠ ছাড়া তৃণমূল জিততে পারবে না। এটা ওদের কালচার।


এনিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, তৃণমূল গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে বলেই একথা বলছে, বিজেপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই তো ত্রিপুরায় ৯৫ শতাংশ আসনে ছাপ্পা হয়। যত বেশি গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে, তত বেশি মানুষ আমাদের পক্ষে থাকবে, সেটাকে সামনে রেখেই ২৪-এ লড়াই হবে।


বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত নির্বাচন। দলের ভাবমূর্তি নিয়ে এখন থেকেই সতর্ক কোচবিহার জেলা তৃণমূল। শেষ অবধি গ্রাম বাংলার ভোট কতটা স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে, উত্তর দেবে সময়।