কলকাতা : তাঁদের আন্দোলনের দিকে উঠেছে অজস্র আঙুল। আন্দোলনের উদ্দেশ্য থেকে সাফল্য, প্রশ্ন উঠেছে অনেক। প্রতিবাদীদের একাধিক জনের বাড়িতে পৌঁছেছে মোডিক্যাল কাউন্সিলের চিঠি। কিছু রাজনৈতিক দলআবার তাঁদের আন্দোলনের পিছনে খুঁজেছেন বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থ ও ইন্ধন। দাবি করেছেন, নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের দাবিকে সামনে রেখে এক রাজনৈতিক গোষ্ঠী হালে পানি পাওয়ার চেষ্টা করছে। এসবের মধ্যেও যাঁরা অন্যায়ের প্রতিবাদে, সুবিচারের দাবিতে অবিচল, তাদের একজন দেবাশিস হালদার।
আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ। বরাবর সরব থেকেছেন অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে। এবিপি আনন্দর 'যুক্তি তক্কো ' অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন, ভয় করছে এবার এবিপি আনন্দর অনুষ্ঠানে আসার জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের চিঠি না আসে ! দেবাশিসের স্পষ্ট বক্তব্য, যাঁরা এই আন্দোলন থেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারেননি তাঁরাও যেমন আঙুল তুলছে তাঁদের দিকে, তেমনই আক্রমণ শানাচ্ছে শাসক দল।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সাফল্য কামনায় ও অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন যাতে থেমে না যায়, তার জন্য বহু মানুষ আর্থিক সাহায্যও করেছেন। আর এই অর্থ নিয়েই নাকি অনর্থ করছেন একদল জুনিয়র ডাক্তার, এমন অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের তরফে। দেবাশিসের সাফ জবাব, সন্দীপ ঘোষ বা আশিস পাণ্ডের মতো দুর্নীতির কিং-পিনদের কাছে তাঁরা হিসেব দেবেন না, দেবেন সেই সব শুভাকাঙ্খী সাধারণ মানুষকে, যাঁরা অভয়ার সুবিচারের দাবিতে করা আন্দোলনের পাশে ছিলেন, আছেন। অডিট চলছে, হিসেব দেওয়াও হবে। দেবাশিস প্রশ্ন তুলেছেন, বেশ কিছু সংবাদকর্মীর নৈতিকতা নিয়েও। তাঁর অভিযোগ, শাসক দল ও বিধায়কদের সাহায্য নিয়ে, তাঁদের নাম করে ভয় দেখিয়ে ও টাকা দিয়ে একদল সংবাদকর্মী ব্যাঙ্ক থেকে ডকুমেন্ট বের করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন।
চিকিৎসক দেবাশিস হালদার স্পষ্ট করে দেন, এই মুহূর্তে, সঞ্জয় রায় ফাঁসির দড়িতে লটকাবে নাকি আজীবন জেল খাটবে, এটা তাঁদের কাছে ন্যায়বিচারের মাপকাঠি নয়, হতেই পারে না। তিনি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, অভয়ার সঙ্গে তাঁর কর্মক্ষেত্রে , অন-ডিউটি অবস্থায় খুন - ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছে, তথ্যপ্রমাণ লোপাটেরও চেষ্টা হয়েছে...যদিও পুলিশের দাবি তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা নাকি হয়নি। দেবাশিসের প্রশ্ন, সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট কেন দিতে পারল না, যার জন্য জামিন পেয়ে গেলেন সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল? বক্তা জহর সরকারের কথার সূত্র ধরে দেবাশিসেরও প্রশ্ন, যদি কোনও সেটিং নাই হয়ে থাকে, তথ্যপ্রমাণ যদি নাই থেকে থাকে, থাকলে কেন সন্দীপ ঘোষকে ৯০ দিন গ্রেফতার করে রাখা হল? তাঁদের কাছে, বিচার পাওয়ার অর্থ হল, যখন এই মর্মান্তিক এই ঘটনায় যারা-যারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রত্যেকের কঠিনতম সাজা হবে। দেবাশিসের প্রশ্ন, যদি সঞ্জয় একাই এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, একথা যদি সত্যি হয়, তাহলে প্রশ্ন কলকাতা পুলিশর একজন সিভিক কর্মচারী কীভাবে মত্ত অবস্থায় হাসপাতালের চারতলা অবধি পৌঁছে যায়? সে কীভাবেই বা জানতে পারে যে সেখানে একা ওই মহিলা চিকিৎসক বিশ্রাম নিচ্ছেন?
দেবাশিস ফের একবার যুক্তিতক্কোর মঞ্চে এসে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের কাজ নিয়ে। চিকিৎসকের বক্তব্য, পুলিশের কাজই তদন্ত করা। বাবা-মাকে টাকা দিতে যাওয়া থেকে, অভয়ার মৃতদেহ পোড়ানোর ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এখানে পুলিশ কী যুক্তি দেবে? রাজ্যের প্রশাসনকে নিশানা করে দেবাশিসের বক্তব্য, 'কথায় কথায় বলা হচ্ছে, এটা উত্তরপ্রদেশ হলে এই আন্দোলনই তোমরা করতে পারতে না...আমরা তো পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। আমরা তো উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত চাই না'।
আসফাকুল্লা নাইয়ার বাড়িতে পুলিশের হানা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেবাশিসের বিস্ফোরক দাবি, মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়ের হাসপাতালে মেডিক্যাল পাশ না করেই চিকিৎসা করেন ছেলে মেয়েরা। তখন তো অভিযোগ করা হয় না, আঙুল ওঠে না ! 'শুধু অভয়ার ন্যায় বিচার নয়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলেছি আমরা, সেখানেই আন্দোলন সফল...আর তাই প্রশ্ন করলেই আমাদের টুঁটি টিপে ধরার চেষ্টা চলবে।' বললেন দেবাশিস।