ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : ঢাকে কাঠি পড়তে এখনও নয় নয় করে আড়াই মাস বাকি। কিন্তু মঙ্গলবারই, পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান বাড়ানো নিয়ে একদিকে যখন চড়া রাজনীতির সুর, এবার তখন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির সম্পাদক ও বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তাঁর দাবি, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো নিয়ে আগেভাগে একগুচ্ছ নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে মুচিপাড়া থানার তরফে।
কিন্তু এরকম নির্দেশিকা কলকাতার অন্য কোনও পুজো কমিটিকে পাঠায়নি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে বিজেপি কাউন্সিলর ও সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সেক্রেটারি সজল ঘোষ বলেন, 'এটা সরকারি ধমকি। সরকারি হুমকি। আমি জানতে চাই এদের এটা দেওয়ার ক্ষমতা আছে ? আমি নাগরদোলা লাগাব না? আমি স্টল লাগাব না? তার থেকে বল না বাবা তুই পুজোটা করবি না। আচ্ছা সারা কলকাতার মধ্য়ে এই প্রেমপত্রটা আমার প্রতি কেন ? এতেই দিদির আমাদের প্রতি ভালবাসাটা পুরো প্রমাণ হয় না কি?
অযোধ্যায় উদ্বোধনের প্রাক্কালে গত বছর দুর্গাপুজোয় সজল ঘোষের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে নজর কেড়েছিল রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ থেকে আলোকসজ্জা। পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন খোদ অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা! সেই পুজো কমিটিকে পাঠানো নির্দেশিকা ঘিরেই এখন চড়ছে রাজনীতির পারদ।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সম্পাদককে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুজো কমিটিকে জানাতে হবে, তাঁদের কোনও লেজার লাইট - সাউন্ড শোয়ের পরিকল্পনা নেই। বলা হয়েছে, বেরোনোর রাস্তা মণ্ডপে ঢোকার রাস্তার চেয়ে বড় করতে হবে। মণ্ডপ থেকে বেরোনোর রাস্তায় কোনও স্টল বা হকার থাকবে না। গতবার ১৪টি সিসিক্য়ামেরা ছিল, এবার তা বাড়িয়ে ৩৬টি করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
মুচিপাড়া থানার তরফে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারকে তাঁদের এবারের পুজোর থিম জানাতে হবে। এ প্রসঙ্গে সজল বলছেন, 'তাহলে কি উনি স্বীকার করছেন বাকি জায়গায় ভিড় হয় না? এক। নম্বর দুই, আচ্ছা একুশে জুলাইয়ের থেকে বেশি ভিড় হয়? এক মুহুর্তে, এক দিনে, এক জায়গায় একুশে জুলাইয়ের থেকে বেশি ভিড় হয়? একটা ব্রিগেডের সমাবেশের থেকে বেশি ভিড় হয়? সেই ভিড়কে নিয়ন্ত্রণ করে কে? পুলিশ করে তো। তাহলে আমার ভিড়কে কে নিয়ন্ত্রণ করবে? পুলিশ করবে। আমি কী চাইব? এত নির্বোধ হয়ে যাব যে আমি চাইব এখানে একটা লোক চাপা পড়ে মারা যাক।'
থিম কী আছে, সেটা আগে থেকে পুলিশকে জানাতে হবে। এনিয়ে সজল ঘোষের স্পষ্ট জবাব, 'কেন বলব ? উনি বলেছেন শেয়ার করতে। চলো শেয়ার করব। আমি তো পাবলিক সাইটে শেয়ার করে দিয়েছি। আর আমি আলাদা করে কী শেয়ার করব? '
কিন্তু, কী চমক থাকছে এবার সজল ঘোষের সুজোয় ? এনিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন তিনি। সেই অনুযায়ী, 'দ্য স্ফিয়ার।' এবার তাদের পুজোর থিমে মা দুর্গা ও তাঁর করুণার কথা তুলে ধরা হবে। বিভিন্ন গল্প ও কিংবদন্তির মাধ্যমে মা দুর্গার সহানুভূতিশীল ও প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতিকে আলোকপাত করা হবে। তুলে ধরা হবে দেবীর করুণা ও ঐশ্বরিক মধ্যস্থতার কথা। আইকনিক লা ভেগাস গোলকের আদলে সাজিয়ে তোলা হবে মণ্ডপ। এর উজ্জ্বল আলো, ১১ ডি শো ও মন্ত্রোমুগ্ধকর ভিজ্যুয়াল শো তাক লাগিয়ে দেবে দর্শনার্থীদের।
এই পরিস্থিতিতে সজল ঘোষের প্রশ্ন, পুজো নিয়ে মঙ্গলবার একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগেই ১৮ জুলাই পুলিশ নোটিস পাঠাল কীভাবে?
এর আগে মুখ্য়মন্ত্রী বলেছিলেন, 'পুজোর থিম সব ক্লাবকে দেখে নাও। থিম ডিসক্লোজ করতে বলছি না কিন্তু পুলিশকে শেয়ার করুন, কী করতে যাচ্ছেন নতুন করে। এমন কিছু আমি করলাম যেখানে সারা কলকাতা স্তব্ধ হয়ে গেল একটা পুজোতে, জেলা স্তব্ধ হয়ে গেল একটা পুজোর জন্য়...নর্থ ক্য়ালকাটাতেও এরকম হয় আমাদের দেখে রাখতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কিন্তু পরের বার ব্ল্য়াক লিস্টেড হয়ে যাবে ।'
এদিকে, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের মতো কোনও পুলিশি নির্দেশিকা হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন উত্তর কলকাতার একাধিক পুজো কমিটির সদস্যরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, কেন শুধু সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারকেই নির্দেশিকা?' ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরব সজল ঘোষ । যদিও এবিষয়ে, ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দর্শনার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই খুঁটিপুজোর আগে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটিকে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। কলকাতার সমস্ত বড় পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পুলিশ রুটিন মাফিক এই কাজ করে থাকে। পুজো কমিটির কোনও আপত্তি থাকলে থানার আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।