কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: এই রাজবাড়ির পুজোয় লুকিয়ে রয়েছে কত না জানা ইতিহাস। মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় এই পুজোর উৎসব অনুষ্ঠান। শোভাযাত্রা করে ঘট উত্তোলন করেন ভক্তরা। অবাক করা এই পুজোর বিচিত্র সব নিয়ম। জেনে নেওয়া যাক বর্ধমানের এই রাজবাড়ির পুজোর অবাক করা সব গল্প।

Continues below advertisement

মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদে রুপোর ঘটে কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরে, ঘোড়ার গাড়িতে করে, ঘট নিয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রা করে মন্দিরে আনা হয়। ঘট উত্তোলন উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রায় ভক্তরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন, জেলাশাসক আয়েশা রানী এ. পুলিশ সুপার সায়ক দাস ,বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমান পুরসভার পুরপতি পরেশ সরকার সহ অন্যান্যরা। এক্কাগাড়ি করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহকারে কৃষ্ণসায়রের চাঁদনী ঘাট থেকে ঘটে জল ভরা হয়। এরপর এই ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় মায়ের মন্দিরে। রাজ আমলের প্রথা মেনেই সোমবার প্রতিপদে বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট উত্তোলন ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যম দিয়েই বর্ধমানে আনুষ্ঠানিকভাবে শারদ উৎসবের সূচনা করা হয় প্রতিবার। সেই প্রথা বজায় রইল এবারেও।

১৭০২ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়ে, চুনুরীদের কাছে থাকা দামোদর নদের পার থেকে উদ্ধার করা হয় এই দেবী মূর্তি। দেবী সর্বমঙ্গলাকে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা সর্বমঙ্গলা। প্রতি বছর চিরাচরিত প্রথা মেনে মহালয়ার পরে প্রতিপদে দেবীর ঘটে জল ভরা হয়, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৯ দিন ধরে চলবে মায়ের পুজো। তার সঙ্গে চণ্ডীপাঠ। নবমীর দিন নবকুমারী পুজোর মাধ্যমে শেষ হয়। এছাড়াও বছরের প্রতিদিনই নিয়ম মেনে দেবীর পুজা হয়, দেবীকে ভোগ নিবেদনও করা হয়। এখানে দেবী কষ্টিপাথরের, অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী। রুপোর সিংহাসনে মা আসীন।

Continues below advertisement

আগে সন্ধি পুজোয় কামান দাগা হত। মেষ, মহিষ ও ছাগ বলি হত। বর্তমানে আর হয় না। সন্ধিপুজোয় কামানের আওয়াজ শুনে আশেপাশের সমস্ত জমিদার বাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হত। নবমীতে হয় নবকুমারীর পুজো। তবে স্বাভাবিক ভাবে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজোকে ঘিরে আনন্দে মতোয়ারা বর্ধমানবাসী। সকাল থেকেই মহিলারা নতুন পোশাকে হাজির হন সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে। জৌলুস কমলেও আজও নিয়ম মেনেই হয়ে থাকে এই পুজো। আশেপাশের সবাই জড়ো হন এই পুজোয়।