প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর, এবার নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (Recruitment Corruption) প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ক্লার্ক অর্ণব বসুকে তলব করল ইডি। আজই সকাল ১১টার পর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ২ দিন আগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাকাউন্টস্ বিভাগে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মী অর্ণব বসুর সল্টলেকের শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। বাজেয়াপ্ত করা হয় বেশ কিছু নথি, অর্ণবের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন।


ইডি-র দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল অর্ণবের। মানিকের নির্দেশেই অর্ণব বিভিন্ন জায়গায় মেল ও চিঠি পাঠাতেন বলে ইডি-র দাবি। সেই সমস্ত মেল বা চিঠি কাদের পাঠানো হত, তা জানতেই এবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ক্লার্ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর।


উল্লেখ্য, মানিক ভট্টাচার্যের প্রসঙ্গ তুলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পালকে পরামর্শ দিলেন বিচারপতি। বললেন মানিক ভট্টাচার্যের ফেলে যাওয়া জুতোয় পা গলাবেন না।তিনি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের একদা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা পর্ষদের সভাপতি পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। কিন্তু ভয়ঙ্কর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে, তিনিই এখন গারদের পেছনে! শুধু তিনিই নন, জেলবন্দি তাঁর স্ত্রী ও পুত্র। এবার মানিক ভট্টাচার্যর প্রসঙ্গ তুলে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পালকে সাবধান করলেন বিচারপতি।


মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে সরাসরি যোগ আর কার? পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই দু’জনের পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তনু দুর্নীতির সাম্রাজ্য চালাতেন। আদালতে রিমান্ড লেটারে দাবি করল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা, কারা অগ্রাধিকার পাবে, কত টাকায় রফা হবে তা ঠিক করার পাশাপাশি, এজেন্টদের সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন শান্তনু। ইডি-র দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় বেনামে বা নিজের ব্যবসার ভুয়ো ডিরেক্টরের নামে একের পর এক সম্পত্তি বানিয়েছেন হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। এর মধ্যে বলাগড়ের চাঁদরায় ৪১ ডেসিমেল আয়তনের ফার্ম হাউসের মালিকানা ইভান কোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের নামে দেখানো হয়েছে। চাঁদরাতেই শান্তনুর ২৮ ডেসিমেল জমি আছে। এছাড়াও, ভুুয়ো সংস্থা তৈরি করে তাতে ডামি ডিরেক্টর, অংশীদার ও কর্মীদের নামে রয়েছে একাধিক সম্পত্তি। ইডি জানতে চায়, কোন কোন প্রভাবশালী নেতা দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে চাকরি করিয়ে দেওয়ার সুপারিশপত্র পাঠাতেন। এসব জানতে জেলে গিয়ে শান্তনুকে জেরা করতে চান তদন্তকারীরা। 


প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি পরামর্শ: এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পালকে পরামর্শ দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'আমার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাতারাতি সুপ্রিম কোর্ট যাওয়ার সময় টাকা থাকে, আইনজীবীদের পিছনে ৩০ লাখ টাকা খরচ করার সময় অসুবিধা হয় না, অথচ টেটের শংসাপত্র দেওয়ার সময় অর্থনৈতিক রীতিনীতির দোহাই! পর্ষদ সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন বিচারপতি। ২০১৪-র প্রাথমিক টেটের শংসাপত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় আজ আদালতে হাজির ছিলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। সেই মামলাতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ২০১৪-র পরীক্ষার্থীরা টেট শংসাপত্র পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল।