ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও শিবাশিস মৌলিক, বীরভূম: দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বিস্ফোরক বিবৃতি বিশ্বভারতী (Visva Bharati) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর (Bidyut Chakraborty)। অধ্যক্ষ-উপাচার্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা পয়সার খেলা চলে বলে দাবি করলেন তিনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।  


স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনয়নের প্রক্রিয়া রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপ মুক্ত নয়। এই সব ক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা পয়সার খেলা চলে। একদিকে বিস্ফোরক, অন্যদিকে উলটপুরাণ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে এবার মোদি সরকারেরই কড়া সমালোচনা করলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।                                  


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) তৈরি বিশ্বভারতী একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তার উপাচার্য নিয়োগ করে দিল্লির সরকার। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকেও নিয়োগ করেছে মোদি সরকার। এই অবস্থায় সোমবার, বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে ৬ পাতার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন উপাচার্য। যার একাংশে তিনি বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতিকদের নিয়ত মাতব্বরি শিক্ষাকে রসাতলে পাঠিয়েছে। দেশের ভবিষ্যতে এর কী বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে তাঁদের কোনও হুঁশ নেই। এমনকি স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য , মনোনয়নের প্রক্রিয়া রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপ মুক্ত নয়! আমি শুনেছি, যদিও আমি ঠিক প্রমাণ দিতে পারব না, এই সব ক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা পয়সার খেলা চলে।                                                       


আরও পড়ুন, 'সামাজিকভাবে চরিত্র হনন হচ্ছে, প্রতিদিন এক কথা শুনছি, কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে', জানালেন পার্থ


সাম্প্রতিক অতীতে উপাচার্য হিসেবে নেওয়া বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনুব্রত মণ্ডলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও।  বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে 'বিজেপির দালাল' বলতেও পিছপা হয়নি রাজ্যের শাসকদল। এই পরিস্থিতিতে তাঁর গলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিশেষজ্ঞমহলে।                                    


কুণাল ঘোষ বলেন, "হাওয়ায় না ভাসিয়ে একটু তথ্য প্রমাণ দিয়ে তো বলতে পারতেন। প্রতিষ্ঠা করার দায় তো তার। কেন্দ্রীয় বলছেন না রাজ্য বলছেন, কী করে বোঝা যাবে।" 


চলতি বছরের জুলাই মাসে, হায়দরাবাদে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, তাঁদের নেতৃত্বে ভারতই হয়ে উঠবে বিশ্বগুরু।  আর এদিন বিশ্বভারতীর উপাচার্য, তাঁর বিবৃতির একেবারে শেষে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে লিখেছেন, সরস্বতীর আশীর্বাদ কখনও ভ্রষ্ট ও অলসদের ওপর বর্ষিত হয় না। বরং তাঁর বরপ্রাপ্ত হন তাঁরাই যাঁরা সর্বাত্মক বিদ্যাচর্চায় মনোনিবেশ করেন। আমরা যদি তেমন বরপ্রাপ্ত হতে পারি, তাহলে  বিশ্ব বা জগৎগুরু হওয়া আমাদের পক্ষে দূরগত স্বপ্ন বলে মনে হবে না। আর তা না হলে, এ শুধু একটা ফাঁপা স্লোগানে পর্যবসিত হবে।