কলকাতা : পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে। পুলিশের দাবি, জন্মের শংসাপত্র থেকে শুরু করে স্কুল সার্টিফিকেট, অ্যাডমিট কার্ড, ভোটার কার্ড সবই জাল। সেই জাল নথি দিয়েই ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিকরা। পুলিশের দাবি, সবথেকে বেশি ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে। যদিও পঞ্চায়েতের দাবি, এমন কোনও নথি ইস্যু করা হয়নি।


পুলিশের দাবি, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের স্কুল সার্টিফিকেট ও অ্যাডমিট কার্ড এবং ভোটার কার্ড। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশন সমস্ত নথিই জাল বলে জানিয়েছে।


বারাসাত পুুরসভা, বনগাঁ এবং কল্যাণীর ঠিকানাতেও বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়। সেগুলিও জাল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। 


এদিকে পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে শুক্রবার ফের আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ। কেন নথি ভেরিফিকেশন সঠিকভাবে করা হয়নি ? প্রশ্ন তোলেন ক্ষুব্ধ বিচারক। পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে, শুক্রবার পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে ধৃত, BA প্রথম বর্ষের ছাত্র, রিপন বিশ্বাস, গড়িয়া পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কর্মী দীপক মণ্ডল এবং বসিরহাট পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর তারকনাথ সেনকে আদালতে তোলা হয়। এরপর শুনানি চলাকালীনই পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারক। 


পাসপোর্ট জালিয়াতি সামনে আসার পর দেখা গেছিল, এই চক্রে বিভিন্ন পোস্ট অফিসের অস্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি জড়িত স্থায়ী কর্মীও। যিনি একেবারে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। আবার এই জালিয়াতিতে প্রশ্ন উঠেছে, জাল নথি দিয়ে এত পাসপোর্ট তৈরি হওয়া সত্ত্বেও, পুলিশ ভেরিফিকেশনে তা ধরা পড়েনি কেন ? এবার সেই ভেরিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলল আদালতও। 


এটা অবশ্য় প্রথমবার নয়। বৃহস্পতিবারও  ভরা আদালতে পুলিশকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন আলিপুর আদালতের বিচারক। ক্ষুব্ধ বিচারক বলেন, আমাদের পাসপোর্ট তৈরির সময় বারবার ভেরিফিকেশন হয়। আর ৭৩ জনের জন্য কিছুই হল না ! 


পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিচারক বলেন, আমার মনে হচ্ছে কারা ভেরিফিকেশন করল, সেই নিয়ে একফোঁটাও তদন্ত এগোয়নি। ভেরিফিকেশন কি পিওনরা করেছিল ? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে যারা ভেরিফাই করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন ?


শুক্রবার ধৃত রিপন বিশ্বাস ও দীপক মণ্ডলকে ৮ জানুয়ারি অবধি জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত।