সুনীত হালদার, হাওড়া: জলই জীবন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই বলে জীবন জুড়ে শুধুই জল! নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হাওড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের পরিস্থিতি তেমনই। অনাবৃষ্টিতেও শ্রেণিকক্ষের ভিতর-বাহির জলে থৈ থৈ করছে সেখানে (Howrah School Waterlogged)। ছপছপ শব্দে সেই জল পেরিয়েই ক্লাসে ঢোকে একরত্তি পড়ুয়ারা। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও জলে পা ডুবিয়েই পড়া বোঝান। মাসের পর মাস এ ভাবেই পঠনপাঠন চলছে ওই স্কুলে (Howrah News)।


ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দিচ্ছেন অভিভাবকরা


হাওড়া বাঁকড়ার ইসলামিয়া হাই অ্যাটাচ প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাম বেশ ভারিক্কি হলেও, স্কুলের অবস্থা তথৈবচ। গত পাঁচ মাস ধরে বৃষ্টির দেখা না থাকলেও, স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, বারান্দায় গোড়ালি সমান জল নিত্যদিনের সঙ্গী। বার বার অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। বরং একে একে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। 


হঠাৎ বৃষ্টিতে জমে যাওয়া জল তো নয়! তাই বলাবাহুল্য ওই জল অত্যন্ত নোংরা। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকতে থাকতে মশা এবং পোকা-মাকড়ের সংসার গড়ে উঠেছে। দুর্গন্ধ বের হয়। নোংরা জলে পা ডুবিয়ে থাকা তো নয় শুধু, শৌচাগারে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার মিড ডে মিল খেতেও বসতে হয় ওই জলে পা ডুবিয়েই। তাতে ছেলেমেয়েদের অনেকের পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছে। পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন এক শিক্ষিকাও। 


হাওড়া শহরের বুকে অবস্থিত ওই স্কুলে আড়ে-বহরে নেহাত কম নয়। প্রাথমিক-উচ্চ মিলিয়ে সকালে-বিকেলে প্রায় ৭৫০ পড়ুয়া রয়েছে। বহু পুরনো ওই স্কুল অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ ছিল এতকাল। কিন্তু গত এক বছর ধরে জল জমে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। অভিভাবকদের অভিযোগ, ওই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করার ফলে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পায়ে ঘা হচ্ছে। ফলে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না।


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: 'কিছু কথা বলতে চাই, পাঁচ মিনিট সময় দিন', আদালতে আর্জি পার্থর


পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, শৌচাগারে জল জমে থাকায় পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা শৌচাগারে যেতে পারছে না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির  শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে, ফোন করে বাড়িতে খবর দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অভিভাবকরা পড়িমড়ি করে ছুটে এসে ছেলেমেয়েকে বাড়িতে শৌচকর্ম সারতে নিয়ে যান। 


স্কুলের প্রাতঃকালীন প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী সোরেন জানিয়েছেন, এই সমস্যার কথা প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। অগত্যা তাঁদের তরফে হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে আপাতত বিদ্যালয়ের কয়েকটি ঘরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে উচ্চ বিদ্যালয়ের তরফে অগাস্ট মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।


সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের নিয়ে রাস্তায় নেমে ক্লাস করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।  স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, সম্প্রতি জলে পড়ে গিয়ে এক শিক্ষিকা গুরুতর জখমও হন। যে কোনও মুহূর্তে পড়ে গিয়ে শিশুরাও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। সেই আশঙ্কাতেই অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সাহস পাচ্ছেন না। তাতে পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির। যত দ্রুত সম্ভব স্কুলটিকে জমা জলের হাত থেকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। 


সরকারি আধিকারিকরা স্কুল পরিদর্শন করে গিয়েছেন


এ নিয়ে হাওড়া জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "এ ব্যাপারে ডোমজুড়ের বিডিও-র সঙ্গে কথা হয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা স্কুল পরিদর্শনও করে গিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে জমা স্কুল সরিয়ে ফেলা যায়।" কিন্তু এতদিন অভিযোগ জানিয়ে বিহিত হয়নি যেখানে, সেখানে আদৌ শেষ মেশ প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে কিনা, অনিশ্চিত অভিভাবকরা।