কলকাতা: যাদবপুরের (Jadavpur University Convocation) সমাবর্তন বিতর্কে মুখ খুললেন রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose)। 'বেআইনিভাবে সমাবর্তন করা হয়েছে। ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। পড়ুয়াদের স্বার্থরক্ষার বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। কারণ আমার উদ্দেশ্য পড়ুয়াদের স্বার্থ রক্ষা করা'। মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করেন রাজ্যপাল-আচার্য সি ভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)।
গতকালই নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে, যে অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে তাঁরই নিয়োগকর্তা আচার্য বরখাস্ত করেছেন, তাঁর হাত দিয়ে ডিগ্রি দেওয়া কতটা আইন সম্মত? এই অবস্থায় শিক্ষকদের একাংশের তরফে দাবি ওঠে, সহ উপাচার্য, যার নিয়োগ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই, সেই অমিতাভ দত্তকে দিয়ে ডিগ্রি দেওয়ানো হোক। এর পর এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪ হাজার ৫৪২ জন ছাত্রছাত্রীকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। যদিও যে শংসাপত্র দেওয়া হয়, তাতে সদ্য অপসারিত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়েরই সই ছিল। সেক্ষেত্রে নানামহলে প্রশ্ন ওঠে, এটা নিয়ে কি ভবিষ্যতে কোনও আইনি জটিলতা হতে পারে?
ঠিক কী হয়েছিল? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ঘিরে চূড়ান্ত নাটক দেখা গিয়েছিল গত ২৪ ডিসেম্বর! ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে বরখাস্ত করেছিলেন আচার্য-রাজ্যপাল। কিন্তু শেষ মেষ এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন সদ্য অপসারিত উপাচার্য। অন্যদিকে রাজভবন সূত্রে দাবি করা হল, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমৃদ্ধি নষ্ট করার জন্য অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে অপসারণ করেছেন আচার্য। কলকাতায় থাকলেও, সমাবর্তনে এলেন না রাজ্যপাল ও UGC-র চেয়ারম্যান।
বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সমাবর্তন হবে কিনা, তা নিয়ে শনিবার থেকেই টালবাহানা চলছিল! রবিবার শেষমেষ, ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বরখাস্ত হওয়া অন্তর্বর্তী উপাচার্যই মঞ্চে দাঁড়িয়ে সমাবর্তনের সূচনা ঘোষণা করলেন। বেশ কিছুদিন থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। একদিকে এই সমাবর্তনের অনুমতি মেলেনি রাজভবনের। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর বলছে অনুমতি আছে। গোটা ঘটনা ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছয় শনিবার!
বুদ্ধদেব সাউকে আপসারিত করেছিলেন রাজ্যপাল: নিজেরই নিযুক্ত করা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে আপসারিত করেন রাজ্যপাল-আচার্য সিভি আনন্দ বোস। তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উচ্চশিক্ষা দফতরও। তাতে বলা হয়, ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে, নিয়ম মেনেই নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারবেন বর্তমান অন্তর্বর্তী উপাচার্য।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন উপাচার্য নিয়োগ মামলা। অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, এই মামলা চলাকালীন আর কোনও অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না আচার্য-রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। উচ্চশিক্ষা দফতরের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সেই নির্দেশের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার সমাবর্তনের মঞ্চে উঠে পড়েন সদ্য অপসারিত অন্তর্বর্তী উপাচার্য।
অন্যদিকে রাজভবন সূত্রে দাবি করা হল, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমৃদ্ধি নষ্ট করার জন্য অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে অপসারণ করেছেন আচার্য। পড়ুয়াদের অনুরোধকে মর্যাদা দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান তিনি বাতিল করেননি। এর জন্য আইনি পরামর্শও নেন আচার্য। সবমিলিয়ে তরজার মধ্যে রবিবার নির্ধারিত দিনে সমাবর্তন হলেও, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।