কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: দুর্নীতিতে নাম উঠে আসছে একের পর এক নেতার। তাতে দলে অস্তিত্ব সঙ্কটে বলে দাবি করছে বিরোধীরাও। সেই পরিস্থিতিতেই দক্ষিণ কলকাতা (Kolkata News) ছেয়ে গেল তৃণমূলের (TMC) হোর্ডিংয়ে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ব্য়াকগ্রাউন্ডে সবুজের প্রলেপ থেকে প্রতীকচিহ্ন জোড়াফুল, সবকিছুই রয়েছে তাতে। নেই শুধু দলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বরং হোর্ডিং জুড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Abhishek Banerjee) দেখা গিয়েছে, মূল ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে পথনির্দেশ করছেন অভিষেক। আবার সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। নেহাত শিল্পীর খেয়াল নাকি, অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে ওই ছবি ছাপানো হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের হোর্ডিংয়ে শুধুই অভিষেক, নতুনত্বের বার্তা
বুধবার ওই হোর্ডিং চোখে পড়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে। হোর্ডিংয়ে লেখা বার্তাও যথেষ্ট অর্থবহ। কারণ তাতে লেখা রয়েছে, 'আগামী ছ’মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল,' 'ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।' এই হোর্ডিংয়ের মাধ্যমে তাহলে কি কোনও বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে শুরু কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। কারণ সম্প্রতি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল। এঁরা দু'জনই মমতার পুরনো এবং বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে পরিচিত। সেই নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যেই শুধুমাত্র অভিষেককে দলের মুখ করে লাগানো হোর্ডিং সাড়া ফেলে দিয়েছে।
তৃণমূলের হোর্ডিং মানেই, তা জুড়ে থাকে মমতার ছবি, এ যাবৎ তেমনই হয়ে এসেছে। কিন্তু শুধুমাত্র অভিষেকের ছবি দিয়ে নতুন তৃণমূলকে তুলে ধরার কথা বলে, ঠিক কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহল। এ নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমনকল্য়াণ লাহিড়ি বলেন, "বাম আমলে শুনতাম, বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্ট। এখন নতুন তৃণমূলের কথা বলা হচ্ছে। পুরনো নতুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে।"
তৃণমূলের অন্দরেই শুধু নয়, বাংলার রাজনীতিতে অলিখিত ভাবে মমতার উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয় অভিষেককে দেখেন অনেকে। সেই অভিষেকের মুখে একাধিক বার দলের 'মেকওভার'-এর কথা উঠে এসেছে। তৃণমূলে 'এক ব্যক্তি, এক পদ' চেয়ে প্রথম সরব হয়েছিলেন অভিষেকই। তার পর এ বছরের গোড়ায় তার সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূলের নেতাদের অনেকে। এমনকি দলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ চালু করার দাবি জানিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় ছবি ও লেখা পোস্ট করতে দেখা যায় তাঁর তুতো ভাই-বোনদেরও।
তার আগে, এ বছর জানুয়ারি মাসে নেতৃত্বের প্রশ্নে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। পৌর নির্বাচন করাতে রাজ্য যখন হাইকোর্টে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে শোনা যায় অভিষেককে। তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া উঠে আসে দলের অন্দর থেকে। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায় জানিয়ে দেন, মমতা ছাড়া কাউকে নেতা বলে মানেন না তিনি। আবার অভিষেকের সমর্থনে পাল্টা কল্যাণকে প্রকাশ্যে বেঁধেন কুণাল ঘোষ, অপরূপ পোদ্দাররা।
সেই সময় মমতার পর অভিষেকই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমনও ঘোষণা করে দেন কুণাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'তৃণমূল কংগ্রেসের এক সৈনিক হিসেবে বলতে পারি, ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন মমতাদি। আর সেই ২০৩৬ সালে তিনি অভিভাবকের মত উপস্থিত থাকবেন এমন অনুষ্ঠানে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন অভিষেক'। অপরূপা আবার লেখেন, 'আমি চাই, আমাদের দিদি ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন আরএসএস মনোনীত রাষ্ট্রপতির থেকে'।
মমতার বদলে হোর্ডিংয়ে শুধু অভিষেক কেন, জল্পনা তুঙ্গে
তাই দুর্নীতির মামলায় পার্থ এবংঅনুব্রতর গ্রেফতারির পর, হোর্ডিংয়ে শুধু অভিষেকের ছবি দিয়ে কি তাহলে বিকল্পের বার্তা দেওয়া হচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাদ মামুদ বলেন, "এটা স্পষ্ট যে দু’টো ঘটনার পর পারসেপশন এমন তলানিতে, যে নতুনের কথা বলতে হচ্ছে। অভিষেকের নেতৃত্বে নতুনের কথা বলে, পুরনো আসলে খারাপ, নতুন শুরু হচ্ছে, এগুলো হবে না, বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বার্তা অভিষেকের নেতৃত্বে। নতুনের দ্বারা ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা।" ইঙ্গিতপূর্ণ এই হোর্ডিং ঘিরে এখন রাজ্য রাজনীতিতেও জোর জল্পনা চলছে।