শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : রাজ্যে ভোট-হিংসায় (Panchayat Poll Violence ) ঝরে গিয়েছে একের পর এক প্রাণ। সরকারি হিসেব যা বলছে বেসরকারি হিসেব তার থেকে অনেক বেশি। ২০২৩ এর পঞ্চায়েত ভোটে রক্ত ঝরা নিয়ে লাগাতার সরকারকে ( West Bengal Government ) নিশানা করেছে বিরোধীরা। এবার পঞ্চায়েত ভোটের ৪ মাস পর সরকার জানাল ভোট হিংসায় নিহতদের পরিবারপিছু একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। 


রাজ্য সরকার জানিয়েছে, নিহতের নিকটাত্মীয়কে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। ভোট- হিংসার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার কথা গত জুলাইয়ে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও পঞ্চায়েত ভোটের ৪ মাস পর রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল অবশেষে। 


সরকারি হিসেব অনুসারে ভোট-হিংসায় প্রাণ  ১৯ টি পরিবারের মানুষরাই এই চাকরি পাবেন। যদিও বেসরকারি মতে, পঞ্চায়েত ভোট-হিংসায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৫০-এর বেশি। তবে তাদের পরিবারগুলোর কী হবে, উঠছে প্রশ্ন। 


ভোট হিংসায় যেমন প্রাণ গিয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের, তেমনই মারা গিয়েছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও।  শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে আদালতে দ্বারস্থ হয় বিরোধীরা। এখন বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে বিরোধী শিবিরের যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবার কি চাকরি পাবে? এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ' সবাইকে ধরলে প্রায় ৬০- ৭০ জন মারা গেছে তাদের সবার রিক্রুটমেন্ট হবে কিনা? আগে তো উনি নিজেদের লোকেদের চাকরি দেন। এ ধরনের স্টেটমেন্ট মাঝেমধ্যে দেন উনি। এখন পর্যন্ত কতজনকে চাকরি দিয়েছেন?'


গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোট। আর তাতে বেলাগাম হিংসার অভিযোগ আনে বিরোধীরা। তবে পঞ্চায়েত ভোটে লাগামছাড়া হিংসার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে, সেটাকে বিক্ষিপ্ত ঘটনা বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেও সে-কথা বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েতে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে বিক্ষিপ্ত, তার জন্য আমরা কেউ তাকে সাপোর্ট করি না। 


২১ জুলাই অবধি মেলা তথ্য অনুসারে (সরকারি তথ্য নয়) পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য়জুড়ে কার্যত মৃত্য়ুমিছিল হয়েছিল।পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে ৩৯ দিনে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। তাতে তৃণমূলের ২৯ জন, কংগ্রেসের ৭ জন, সিপিএমের ৪ জন , বিজেপির ৫, ISF-এর ৩ এবং ৪ জন সাধারণ ভোটারের মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারি পরিসংখ্যান এর থেকে অনেকটাই আলাদা। 


ভোট আসে, ভোট যায়। কিন্তু, বাংলায় ভোট-সন্ত্রাসের চিত্রে কোনও বদল আসে না। এবার ভোট হিংসায় নিহতদের পরিবারপিছু একজনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে, বুক বাঁধছে অনেক পরিবার। তবে বিরোধী দলগুলির সমর্থকদের মধ্যে যাঁদের প্রাণ গিয়েছে , তাঁদের পরিবার এই চাকরিপ্রাপকের তালিকায় থাকে কিনা তাই দেখার।