তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া : বাঁকুড়ার সোনামুখী ( Bankura Sonamukhi ) লোকমুখে পরিচিত কালীক্ষেত্র ( Kali Puja ) হিসেবে। প্রচুর সংখ্যায় কালীপুজো হয় এখানে। তারই মধ্যে বিশেষ প্রসিদ্ধ বাঁকুড়ার 'শিকলে বাঁধা কালী'। শিকড়ের গল্প খুঁজতে গেলে চলে যেতে হবে  ৪০০ বছর আগে। যখন এই শহর ছিল জঙ্গলে ঘেরা। শহরের অলিগলিতে সেভাবে গড়ে ওঠেনি বসতি। 


সোনামুখী   কার্তিক ও কালীপুজোর জন্য বিখ্য়াত। এই জেলায় হয় বহু প্রাচীন পুজো। তার মধ্যে অন্যতম ক্ষ্যাপা কালী। প্রাচীন প্রথা মেনে আনুমানিক ৪০০ বছর ধরে এই কালীর পুজো হয়ে আসছে। জনশ্রুতি, এই কালীপুজোর সূচনা শহর গড়ে ওঠার আগে। 


কথিত আছে, একদিন এই জনপদের কুমোর পাড়াতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে যায়। গরিব কুমোররা মায়ের কাছে কাতর আর্জি জানায় তাদের এই পাড়াকে রক্ষা করার জন্য। সেইসময় হঠাৎই কোনও এক দৈব শক্তি বলে, সেই আগুন আয়ত্তে এসে যায়। তারপরেই এই অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখেন মায়ের ৪ হাতের মধ্যে উপরের দুই হাত  কালো হয়ে গেছে। ফলে মনে করা হয় ক্ষ্যাপা মা স্বহস্তে এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। তাই তাঁর হাত আগুনের আঁচেই কালো হয়ে যায়। 


মানুষের বিশ্বাস, ধ্বংসের হাত থেকে জনবসতিকে রক্ষা করেন মা। এই পুজো নিয়ে আরেক ইতিহাস লুকিয়ে আছে । কিন্তু মায়ের নাম ক্ষ্যাপা মা কেন? মানুষের বিশ্বাস, এই  মা কালী খুবই দয়াময়ী। কিন্তু মায়ের পুজোর কোনও রূপ  বিঘ্ন ঘটলে মা নাকি রুষ্ট হয়ে মন্দির ছেড়ে পালিয়ে যান। তাই পুজোর দিন থেকে মায়ের পিছনের পা শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে। মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন সেই শিকল থেকে মায়ের পা খুলে নিরঞ্জন করা হয়।
 
হটনগর কালীপুজো


এছাড়াও প্রাচীন পুরশহর বাঁকুড়ার সোনামুখীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য কালীমন্দির হল হটনগর কালীমন্দির। বয়স প্রায় সাড়ে চারশো বছর।  সুসজ্জিত প্রাচীন এই কালী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস! সাড়ে চারশো বছর আগে এই অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা। কথিত আছে,  সেই সময় তারিণী সূত্রধর নামে এক বৃদ্ধা প্রতিদিন সেই জঙ্গল পেরিয়ে বড়জোড়ায় চিঁড়ে বিক্রি করতে যেতেন। ফেরার সময় নিয়ে আসতেন ধান। পথেই একটি খালের ধারে বিশ্রাম নিতেন বৃদ্ধা। সেখানে একদিন লাল শাড়ি পরা এক ছোট্ট মেয়ে ওই বৃদ্ধার কাছে সোনামুখী নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরে। প্রথমে না বললেও, পরে ওই মেয়ের জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যান তারিণী। সেদিন রাতেই কালী পুজোর স্বপ্নাদেশ পান তারিণী নামের ওই বৃদ্ধা। স্থানীয় জমিদার পত্নী কাদম্বরী দেবী মন্দির নির্মাণের জন্য জমি দেন। তারপর থেকেই শুরু হয় হটনগর কালী মন্দিরের পুজো।