প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: খেলনাগাড়ির মতো লাইন থেকে বেরিয়ে উল্টে গেল ট্রেনের বগি, দুমড়ে-মুচড়ে গেল কামরা, শূন্য উঠে গেল বগি। বালেশ্বরের স্মৃতি ফিরল শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ায়। সোমবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। কিন্তু শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কার?
রেল বোর্ডের চেয়ারপার্সন মালগাড়ির চালকের ঘাড়ে দোষ চাপালেও সামনে আসছে নতুন তথ্য। রেল সূত্রে খবর, রাঙাপানি ও আলুয়াবাড়ি স্টেশনের মাঝে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল অকেজো ছিল। পাশাপাশি, রেলওয়ে ট্র্যাকিং সিস্টেমও কাজ করছিল না। ফলে রাঙাপানি স্টেশন পেরিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা যে দাঁড়িয়ে পড়েছে, তা জানতেই পারেননি রেলওয়ে ট্র্যাকিং সিস্টেমে নজরদারি চালানো রেল কর্মীরা।
রেল সূত্রে খবর, রানিপাত্র ও চটের হাট জংশনের মধ্যে ৯টি সিগন্যাল রয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও মালগাড়ির চালক, ২ জনকেই পেপার ক্লিয়ারেন্স মেমো ইস্যু করা হয়েছিল। এর মানে হল, লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৯টি সিগন্যাল পেরিয়ে যাওয়ার পর দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ওই লাইন ধরেই এগিয়ে যায় মালগাড়ি। রেলওয়ে ট্র্যাকিং সিস্টেম কাজ না করায়, এক্সপ্রেস ট্রেন ও মালগাড়ির গতিবিধি নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন রেল কর্মীরা। ঠিক কী ঘটেছিল জানতে তদন্তে নেমেছে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। আজ রেলের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি, প্রত্যক্ষদর্শীদেরও বয়ান রেকর্ড করা হবে।
সংবাদ সংস্থা PTI রেলের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাঙাপানি এবং আলুয়াবাড়ি অংশের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ‘অকেজো’ ছিল। স্বয়ংক্রিয় সিগনাল বন্ধ থাকায় ওই অংশে খুবই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। কখনও আবার ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়াও হচ্ছিল। সোমবার সকাল ৮টা ২৭ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন ছেড়ে এগোনোর পরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
স্বয়ংক্রিয় সিগনাল বন্ধ থাকায় খুব ধীর গতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলছিল। ওই ট্রেনের জন্য ছিল বিশেষ 'কাগুজে' ছাড়পত্র। রেলের পরিভাষায় যাকে ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (PLCT) বলে। রেলের সূত্রের দাবি, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার ‘TA 912’ ফর্ম দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চালাচ্ছিলেন চালক।
কিন্তু ‘TA 912’ আসলে কী?
রেলের বক্তব্য়, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হয়ে গেলে এই 'কাগজের' ভিত্তিতেই ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন চালক। সিগনাল লাল থাকলেও নিয়ন্ত্রিত গতিতে ট্রেন চালাতে পারেন তিনি।
একই লাইনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও মালগাড়ি এল কী করে?
রেল সূত্রে দাবি, সিগনাল অকেজো থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালককে এগিয়ে যাওয়ার জন্য় 'লিখিত ছাড়পত্র' দিয়েছিলেন স্টেশন ম্যানেজার। কিন্তু, মালগাড়ির চালককেও কি 'লিখিত ছাড়পত্র' দেওয়া হয়েছিল? কিন্তু একই লাইনে একটি ট্রেন ও একটি মালগাড়িকে যাওয়ার 'লিখিত ছাড়পত্র' কি করে দেওয়া সম্ভব? রেলের তদন্ত রিপোর্টে শেষ অবধি কী উঠে আসে, সেটাই দেখার।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে