আবির দত্ত, পার্থপ্রতিম ঘোষ এবং ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের ওপর আগেও হামলার ছক কষেছিল গুলজার। পুলিশের দাবি, দু’-দু’বার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তৃতীয়বারে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে। খুনের বরাত দিয়েছিল বিহারের বাসিন্দা ইকবালকে। দেওয়া হয়েছিল ১০ লক্ষ টাকার সুপারি।  পুলিশ জানতে পেরেছে, এবার চার মাস আগে তৈরি করা হয়েছিল হামলার ব্লু প্রিন্ট।  


ব্যস্ত কলকাতার জমজমাট এলাকায় ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে গুলি করে খুনের চেষ্টা। হাড়হিম করা এই ঘটনাতেই এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দু-দু'বার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের ছক কষা হয়েছিল। তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুন করতে বিহারের মুঙ্গের থেকে আনা হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র, শার্প শ্যুটার।


কিন্তু ভিড়ের মধ্যে নিশানা করা সম্ভব না হওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। লালবাজার সূত্রে খবর, শনিবার তৃণমূল কাউন্সিলরের ওপর হামলার ঘটনায় ধৃত গুলজারকে জেরা করে এমনই সব তথ্য সামনে এসেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রথম দু'বারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় এবার তাই মরিয়া ছিল গুলজার। 


এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হামলাকারী যুবরাজ সিংহ, আহমেদ নামে এক ট্যাক্সি চালক এবং মূল অভিযুক্ত আফরোজ খান ওরফে গুলজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, গুলজার স্বীকার করেছে হামলার কথা। ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ইকবাল ও গুলজার আলাদা ব্যক্তি। ইকবাল মুঙ্গেরের বাসিন্দা। তৃণমূল কাউন্সিলরের ওপর হামলার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল জুলাই মাসে। 


কীভাবে হামলার ছক? 


সুশান্ত ঘোষকে খুন করতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে গুলজার। ১০ লক্ষ টাকায় ডিল হয়। মুঙ্গের থেকে দুটি 9MM পিস্তল ও লোক পাঠায় ইকবাল। হামলার জন্য বিহার থেকে ৩ জনকে আনা হয়। এদের মধ্যে একজন মাসখানেক আগে বৈশালী থেকে কলকাতায় আসে। ১৪ নভেম্বর আরও দুই হামলাকারী বিহার থেকে রাজ্যে আসে। 


হাওড়া থেকে লঞ্চে বাবুঘাটে পৌঁছনোর পর ট্যাক্সিতে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কালিন্দী হাউসিং এস্টেটের একটি ফ্ল্যাটে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ট্যাক্সি চালক এরপর গুলজারকে নিয়ে কালিন্দীতে যায়। শ্যুটারকে হামলার ব্লু-প্রিন্ট বুঝিয়ে দেয় গুলজার। বিকেলে ট্যাক্সি চালক কালিন্দী থেকে হামলাকারীদের নিয়ে আসে পার্কসার্কাস চার নম্বর ব্রিজের কাছে। সেখানেই দুটি আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেয় হামলাকারীদের হাতে। স্কুটার নিয়ে এসেছিল এক যুবক। তার স্কুটারে বসিয়ে অপারেশনে পাঠানো হয় শ্যুটারকে।


পিছনের ট্যাক্সিতে ছিল গুলজার। হামলার সময় একটি ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। দ্বিতীয় পিস্তলটি ছিল স্কুটার চালকের কাছে। এদিন অস্ত্রের খোঁজে তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়ির কাছের খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।  পুলিশ সূত্রে দাবি, অপারেশনের সময় ট্যাক্সি নিয়ে আহমেদ বন্ডেল গেট এলাকায় অপেক্ষায় ছিল। অপারেশনের পর হামলাকারীদের নিয়ে পালাবে এমনটাই ছিল ছক। 


কিন্তু মোক্ষম সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি না বেরোনোয় ভেস্তে যায় তৃতীয়বারের পরিকল্পনাও।  অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে খবর পেয়ে বিহারে পালানোর সময় পূর্ব বর্ধমানের গলসি থেকে মূল চক্রী আফরোজ খান ওরফে গুলজারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয় শ্যুটার যুবরাজ সিং-কে। এরপর ট্যাক্সি চালক আহমেদও গ্রেফতার হয়। 


এদিন আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম অমৃতা দে-র এজলাসে পেশ করা হয় গুলজারকে। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, গুলজার প্ল্যান মেকার। গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে হবে। জেরা করে আরও অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। মুঙ্গের থেকে অস্ত্র এনেছিল। বিহার যেতে হবে তদন্তকারীদের। আরও অন্যান্য লোক জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। 


কালিন্দীর ওই আবাসনের কেয়ারটেকারকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এখন গুলজারকে জেরায় মেলা তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ।  


 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে