ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: করোনার মধ্যে এবার নতুন উদ্বেগ ডিপথেরিয়া। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, নতুন বছরের গোড়া থেকে আচমকা ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তিও হচ্ছেন তাঁরা। এমনকি সম্প্রতি ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুরও মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। আর তাতেই বাড়ছে দুশ্চিন্তা। 


করোনা সংক্রমণের ঢেউ এখন অনেকটাই স্তিমিত। খুলেছে স্কুল, কলেজ। বিধিনিষেধ আরও খানিকটা আলগা করে চলছে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা। এই প্রেক্ষিতেই দেখা যাচ্ছে ডিপথেরিয়ার বাড়বাড়ন্তের চোখ রাঙানি। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, সম্প্রতি ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বছর তিনেকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়।


শুধু তাই নয়। বর্তমানে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন ৬ জন ডিপথেরিয়া আক্রান্ত রোগী। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। অন্যদিকে হাসপাতালে ডিপথেরিয়া নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি দিন সাতেক আগে বছর তিনেকের এক শিশুর মৃত্যুও হয়েছে। বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনিমা হালদার জানিয়েছেন, "৬ জন ভর্তি। তিন শিশু। তিন জন বড়ো। এক শিশু মারা গিয়েছে। NRS পাঠানো হয়েছিল। ই এন টি বিভাগে। মারা যায়।" 


ডিপথেরিয়ার কারণ হল একটি বিশেষ ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। যার নাম - করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকটা করোনার মতোই হাঁচি, কাশি ও ড্রপলেটের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হয় ডিপথেরিয়ার ব্যাক্টেরিয়া।  গলা ব্যথা, কিছু গিলতে না পারা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর- মূলত এগুলোই হল ডিপথেরিয়ার উপসর্গ। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে Indian Journal of Public Health-এ রাজ্যের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞদের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। 


ওই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আক্রান্তদের অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। ডিপথেরিয়ায় মৃত্যুর হার বেশি- সেটাই হল চিকিৎসকদের উদ্বেগের কারণ। তাঁরা বলছেন, রোগ দ্রুত চিহ্নিত না হলে, ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীর মৃত্যু হার প্রতি ৫ জনে একজন। অর্থাত্‍ ১০০ জনে ২০ জন। আর ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে, মৃত্যুহার প্রতি ১০০ জনে ১০ জন।


ডিপথেরিয়ার ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বড়দের ১০ বছর অন্তর টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে রোগ চিহ্নিত হলে রোগীকে যাতে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।