ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা:  কলকাতা ও শহরাঞ্চলে বসবাসকারী পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে। আর শহরের মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা। আর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বাড়ছে খাদ্যনালীর ক্যানসার। কলকাতার একটি হাসপাতালের গত ২৫ বছরের রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সমীক্ষায় উঠেছে এই তথ্য।


প্রতিদিন বেড়ে চলা বায়ুদূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, পাশ্চাত্যের অনুকরণে খাদ্যাভ্যাস। এমন নানা কারণে আধুনিকতা সর্বস্ব শহুরে জীবনে থাবা বিস্তার করছে কর্কট রোগ। চিকিৎসক, গবেষকরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন এই কথা। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চালানো সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে , এরাজ্যে কলকাতা ও শহরতলিতে বসবাসকারী পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে। আর শহরাঞ্চলের মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা। 


কলকাতা ও শহরতলিতে খাদ্যনালীতে ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে পুরুষ এবং মহিলা দুইয়েরই। সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। কলকাতার ওই হাসপাতালে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, ২৫ বছরে যত ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা হয়েছে, তার তথ্য বিশ্লেষণ করে উঠে এসেছে এই তথ্য। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলার শহরাঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের প্রবণতা ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ শতাংশ।


রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে পুরুষদের মধ্যে মুখের ক্যানসারের প্রবণতা ২৫ বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সমীক্ষক জ্যোতিরূপ গোস্বামী, "শহরাঞ্চলে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ ধূমপান আর দূষণ। গ্রামাঞ্চলে সস্তায় মুখে তামাকজাত দ্রব্য ভরে রেখে নেশা।" সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে, রাজ্যের শহরাঞ্চলের মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। আর খাদ্যনালীর ক্যানসার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দ্বিগুণ চেহারা নিয়েছে! 


সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত, "শহরের মহিলাদের জীবনযাত্তার ধরন স্তন ক্যানসার বাড়ছে। পাশ্চাত্যের খাদ্যাভ্যাস অবলম্বন করছেন। গ্যাসট্রো ইনটেস্টাইন ক্যানসার বাড়ার অন্যতম কারণ - শাক সবজি না খেয়ে রাসায়নিক মেশানো প্রশেসড ফুড খাওয়া। মদ, রেড মিট --- এসবও কারণ।"  প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার সহজে ধরা পড়ে না। আর শেষ পর্যায়ে ভাল চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হয় না। তাই স্তন ক্যানসারের বাড়বড়ন্ত রুখতে আরও বেশি করে পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। 


ক্যানসার বিশেষজ্ঞ দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, "আমি সমীক্ষার ফলের সঙ্গে একমত। গ্লোবাল ট্রেন্ডও তাই বলছে। ব্রেস্ট ক্যানসার বাড়ছে। দরকার ব্রেস্ট এগজামিনেশন। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে হাতে করে স্তন পরীক্ষা করে দেখা। স্বাস্থ্য দফতর এবিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে।" 


সমীক্ষায় আশার আলোও আছে, যা বলছে,  রাজ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। শহরাঞ্চলে পুরুষদের মুখের ক্যানসারও আগের চেয়ে কম।