তুহিন অধিকারী, বাঁকুড়া: কে বলে পুজো (durga puja) মানে শুধুই উৎসব (celebration), আনন্দ আর জাঁকজমক (grandeur0? কত শত বছরের ইতিহাস (history) যে তার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে তা আজও জানে গ্রামবাংলা। শরতের Spring) আকাশ-বাতাস যখন আগমনীর সুরে নিজেকে মেলে ধরে, তখন সেই ইতিহাস যেন আরও বেশি করে টানতে থাকে বহু মানুষকে। বাঁকুড়ার (bankura) পাত্রসায়রের মণ্ডল বাড়ির (mandal family) কথাই ধরা যাক। আড়াইশো বছর পুরনো এই দুর্গাপুজোর শুরুটাই ভারী অদ্ভুত। 


ইতিহাসের আলোয় ছায়ায়...
সালটা ১৭১২। বর্ধমান জেলার নীলপুরের বাসিন্দা মুচিরাম ঘোষ স্রেফ ভাগ্য অন্বেষণে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরলেন বেশ কিছু দিন। শেষে ক্লান্তি যখন চরমে, তখন গিয়ে পৌঁছলেন বাঁকুড়া জেলার  পাত্রসায়ের থানার হদয় নারায়ণপুরে। সেখানকার মনোরম পরিবেশ মুগ্ধ করেছিল মুচিরামকে। জায়গাটা দেখেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন এখানেই থাকবেন। দীর্ঘ দিন বসবার করার পরে পাশের গ্রামের বাসিন্দা রামপুরের জগন্নাথ চৌধুরীর সঙ্গে দিব্যি সখ্য তৈরি হয় তাঁরা। এই জগন্নাথ চৌধুরী আসলে গণিত আচার্য শুভঙ্কর রায় যিনি কিনা মল্ল রাজাদের কাছ থেকে উপাধি পেয়েছিলেন। বন্ধুত্ব গাঢ় হওয়ার পর মুচিরাম ঘোষকে নিয়ে একদিন বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মল্ল রাজ গোপাল দেব সিংহ ঠাকুরের কাছে পৌঁছে যান শুভঙ্কর রায়। শোনা যায়, মুচিরামের সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হয়েছিলেন রাজা। তার পরই তৎকালীন পাত্রসায়রের পারুলিয়া পরগনার জমিদারির দায়িত্বভার তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মুচিরাম ঘোষকে মণ্ডল উপাধিও দিয়েছিলেন মল্ল রাজ। সেখান থেকেই মণ্ডল বাড়ির নামকরণ হয়েছিল। আর মুচিরামের কয়েক পুরুষ পর থেকে ওই জমিদারি বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। তবে এখন যে জাঁকজমকের সঙ্গে পুজো হয়, তার নেপথ্যে আরও একটি ইতিহাস রয়েছে।


জাঁকজমকের দুর্গাপুজো...
মণ্ডল পরিবারের সপ্তম পুরুষ, বেচারাম মণ্ডল তখন জমিদার।  ভারতে ব্রিটিশ শাসন চলছে। শোনা যায়, এক দিন নদীপথে বাণিজ্য করে ফেরার সময় শ্রীরামপুরের কাছে ডাকাতদের কবলে পড়েছিলেন বেচারাম। এদিকে সেই বছর বাণিজ্যে বিস্তর মুনাফা হয়েছিল। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে ডাকাতদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন বেচারাম। যদিও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না তাঁর দুই লাঠিয়াল। দামু ও কামু। ডাকাতদের সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে জমিদার বেচারাম মণ্ডলকে উদ্ধার করেন তাঁরা। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে সে বছর দুর্গাপুজো আরও ধুমধাম করে চালু করেন বেচারাম। সেই পুরনো রীতিনীতি মেনেই আজও পাত্রসায়রের জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এবারও তার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মাকে স্বাগত জানাতে জমিদার বাড়ির প্রবেশদ্বারের দুদিকে আজও দাঁড়িয়ে লাঠিয়াল দামু ও কামুর মূর্তি। 
সেই কয়েকশো বছরের ঐতিহ্য মেনেই হচ্ছে সব।


আরও পড়ুন:অনস্ক্রিন স্ত্রী স্বস্তিকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা, দিব্যজ্যোতি শেয়ার করলেন ছুটির ছবি